হাওড়া: ঠিক কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে? কীভাবে মারা গেলেন আমতা আনিস খান ? আমতার ছাত্র নেতার মৃত্যুর (Amta Student Leader Death) পরতে পরতে নতুন তথ্য! প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে খুন করা হয়েছে তাঁকে। শুক্রবার রাতে, তাঁর বাড়িতে ‘পুলিশ’ গিয়েছিল। অভিযোগ উঠছে, তিন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক পুলিশ অফিসার এসেছিল। তারা জোর করে বাড়িতে ঢুকে তিনতলায় উঠে যায়। তার কিছুসময় পরেই ভারী কিছু উপর থেকে নীচে পড়ার আওয়াজ। ছুটে গিয়ে দেখা যায়, আনিস পড়ে আছে। অভিযোগ উঠছে, যারা সেই সময় বাড়িতে এসেছিল, তারাই ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। তবে, আমতা থানা বা এসডিপিও অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তারা গতকাল কোনও পুলিশ বাহিনী আনিস খানের বাড়িতে পাঠায়নি। তাহলে ওই তিন সিভিক ভলান্টিয়ার, এক পুলিশ অফিসার কারা ছিল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এ বার, আনিসের মৃত্যুতে মুখ খুললেন রাজনৈতিক নেতারা।
সিপিএমের পর্যবেক্ষণ
বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “পুলিশকে দিয়ে একজন যুবনেতাকে খুন করানো হল। পুলিশের পোশাকে চারজন লোক উপরে উঠে গিয়ে একজনকে খুন করে এল! পুলিশ বলছে তারা লোক পাঠায়নি! তাহলে এটা কী ! পুলিশ মন্ত্রী জবাব দিন!” রবিবারই আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে বিক্ষোভে নেমেছে এসএফআই। রবিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত আমতা।
বিজেপির পর্যবেক্ষণ
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “এভাবে একজন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তার তদন্ত করা উচিত। এটা কোনওভাবেই কাম্য নয়। তবে, আদৌ পুলিশ খুন করেছে কি না, নাকি আনিস আত্মহত্যা করেছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে আত্মহত্যা বলেই তা প্রমাণিত হবে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, “আমার মনে হয়, একজন রাজনৈতিক নেতার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। পুলিশ যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে। প্রয়োজনে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করা হোক।”
তৃণমূলের পর্যবেক্ষণ
আনিসের মৃত্যুতে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, “অত্যন্ত নৃশংস, জঘন্য ঘটনা। এর তদন্ত হওয়া উচিত। বাইরের রাজ্যের লোক এসে এমন কিছু ঘটিয়েছে কি না সেটা দেখার। এসব উত্তর প্রদেশে হয়। বাংলায় নয়। বাইরের লোক এসেই ষড়যন্ত্র করে এভাবে ছাত্রনেতাকে খুন করেছে। পুলিশ এর তদন্ত করুক।”
স্থানীয়দের একাংশ জানিয়েছেন, মৃত আনিস খান এলাকায় আইএসএফের সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তবে এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব আগে থেকেই বেশি ছিল। সেদিক থেকে দেখলে খুনের পিছনে রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তবে সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনাটি খুন নাকি আত্মহত্যা, সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আনিস খানের মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যেই তোলপাড় হতে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতি। সরব হয়েছে বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলিও। উল্লেখ্য, আনিস যখন বাগনান কলেজে পড়তেন, তখন এসএফআই করতেন। আনিসের মৃত্যুতে তাঁর বাবা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি ছেলের মৃত্যুর জন্য সিবিআই তদন্ত চান। আমতার পুলিশকে তাঁর কোনও ভরসা নেই।