হাওড়া: সন্ধ্যা ছ’টার পর যেন কোনও তদন্তকারী না আসেন বাড়িতে। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আনিস খানের দাদা সাবির খান। আনিস মৃত্যুতে ক্রমেই জেলা পুলিশের গড়িমসি সামনে এসেছে। সিটের সুপারিশে সাসপেন্ড করা হয়েছে আমতা থানার তিন পুলিশকর্মীকে। তবে শুধু সাসপেনশনই যথেষ্ট নয়। দোষীদের চিহ্নিত করে যোগ্য শাস্তি দিতে হবে। সিট তদন্ত সত্ত্বেও সিবিআই তদন্তে অনড় আনিসের দাদা সাবির খান।
কী বললেন আনিস খানের দাদা?
আনিস খানের দাদা সাবির খান বলেন, “আমি একটা কথা বলতে চাই। দিদিকে একটা রিক্যুয়েস্ট করতে চাই। সিট তৈরি হয়েছে, সেই তদন্তকারীদের কাছেও অনুরোধ করতে চাই, আমার বাড়িতে সন্ধ্যা ৬টার পর আসবেন না। আমার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। আমার বাড়িতে মহিলাদের সংখ্যাও বেশি। সন্ধ্যা ৬টার পর কোনও তদন্তকারী বা পুলিশ যেন না আসে। আমাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। খাওয়াদাওয়া এমনিতেই বন্ধ। রাত ১২-১টা নাগাদ খবর পাচ্ছি সিট আসবে। আমার ভাইকে মেরে গিয়েছে ১টার সময়ে পুলিশ এসে। তাই বলছি সন্ধ্যার পর যেন আমার বাড়িতে পুলিশ কিংবা তদন্তকারীরা যেন না আসেন। যা করবেন দিনেরবেলায়। পুলিশকে তো কেউ বাধা দেয়নি দিনে আসতে। প্রথম দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছিল দেরিতে এসেছিল বলে। দিদির ওপর ভরসা আছে। এখনও আস্থা রাখছি দিদি একবার আসুন। আমরা আর যেতে পারব না আমার বাবা অসুস্থ। দু-চারটে কথা বলব দিদিকে।”
জেলা পুলিশ ‘নিস্পৃহ’
গত তিন দিন ধরে দেখা গিয়েছে জেলা পুলিশ ‘নিস্পৃহ’। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর সিট যে কাজটা করেছে, তা হল পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তের প্রথম দিনই, আমতা থানার পুলিশ কর্তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করলেন তাঁরা। আনিসের পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। সেটি স্পষ্ট করতেই প্রথমে এই দিকেই নজর দেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিন থানায় কারা কারা ডিউটিতে ছিলেন, সেটা জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। সোমবার রাত সাড়ে দশটার মধ্যে সিটের ডিআইজি সিআইডি অপারেশন মিরাজ খালিদ, বারাকপুর কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার ধ্রুবজ্যোতি দে-র তদন্তকারী দল নিয়ে আমতা থানায় পৌঁছয়। টানা চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সকালে তিন জন সাসপেন্ড করা হয়।
ওই ৩ পুলিশের আড়ালে মাথা কে?
আনিসের একটা রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে, সেদিক থেকে কোথাও কি পুলিশ অন্য কারোর নির্দেশে এরকম কোনও কাজ করেছে? কারণ প্রাথমিক তদন্তের পর যে রিপোর্ট উঠে আসছে, তাতে এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, যাতে জোরালভাবে বলা যায় ওই রাতে পুলিশ সেজে বা পুলিশের পোশাক পরে কেউ ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। তদন্তে বলছে, পুলিশই ওই রাতে আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল। তবে সাসপেন্ডেড তিন পুলিশ কর্মীই যে আনিসের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ সরকারিভাবে জানিয়েছে, যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, ঘটনার পর আনিসের বাবা বারবার থানায় ফোন করেছিলেন। পরিবারের লোকেরা ফোন করেছেন, কিন্তু পুলিশ ছিল নির্লিপ্ত।
তবে শুধু সাসপেনশনই যথেষ্ট নয়। দোষীদের চিহ্নিত করে যোগ্য শাস্তি দিতে হবে। সিট তদন্ত সত্ত্বেও সিবিআই তদন্তে অনড় আনিসের দাদা সাবির খান।
আরও পড়ুন: ৮৩ ঘণ্টায় কি তবে তথ্য প্রমাণ লোপাট? আনিস মৃত্যুতে জেলা পুলিশের কী ভূমিকা?