হাওড়া: জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এই সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার হাওড়া ময়দান চত্ত্বরে মঙ্গলাহাট বন্ধের নির্দেশ আগেই দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেই নির্দেশকে অমান্য করে রবিবার সকালেই মঙ্গলাহাটের কাপড়ের দোকানের কিছু ব্যবসায়ী মালপত্র নিয়ে হাটে বসতে যান। কিন্তু এতে পুলিশ বাধা দিতে শুরু করে। এরপর হয় গন্ডগোল।
প্রথমে পুলিশের সঙ্গে বাধে বচসা তারপর হাওড়া থানার সামনে ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ। পরে হাওড়া ময়দানের বঙ্গবাসী মোড়ে অবরোধ করেন হাট ব্যবসায়ীরা। এর জেরে রবিবার সকাল ১১টা থেকে প্রায় আধঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জি টি রোড। বঙ্কিম সেতুর আগে হাওড়া থেকে কলকাতাগামী যানচলাচল থমকে যায়।
প্রসঙ্গত দুদিন আগেই প্রশাসনের নির্দেশের পরেই মঙ্গলা হাট খুলে রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। অবশেষে সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে হাট ব্যবসায়ীদের ডাকার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিন মলয় দত্ত নামে সমবায়িকা হাটের বিক্ষোভকারী এক ব্যবসায়ী জানালেন, হাট মালিক বা সমিতির সঙ্গে আলোচনা না করেই এ সপ্তাহে তিন দিন মঙ্গলাহাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এটা ঠিক হয়নি। ফলে অনেক ব্যবসায়ীই হাট বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারেননি। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের। শেখ আনোয়ার নামে অপর এক বিক্ষোভকারী হাট ব্যবসায়ীর কথায়, সংক্রমণের আশঙ্কায় হাওড়া হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলাহাট বসাতে প্রশাসনের আপত্তি। কিন্তু কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কোলে মার্কেট রয়েছে। এই মার্কেট তো সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ হয়নি। এরকম রাজ্যের সবজায়গায় হাট, বড় বাজার খোলা থাকলেও শুধুমাত্র মঙ্গলাহাটকে বন্ধ রেখে জেলা প্রশাসন অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে আজ সোমবারই মঙ্গলাহাটের মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে জেলা প্রশাসন। হাওড়া ময়দানের শরৎসদনে এদিন বৈঠকে স্থির হবে করোনা পরিস্থিতিতে মঙ্গলাহাট কতদিন বন্ধ থাকবে বা আদৌ বন্ধ হবে কিনা। রবিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী জানালেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কিছু সমম্বয়ের অভাবের জন্য হাট ব্যবসায়ীরা সোমবার তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনার বিষয়টি জানতেন না। জানার পরই বিক্ষোভ তুলে নেন ব্যবসায়ীরা। আপাতত এ সপ্তাহে হাট বন্ধ থাকলেও সোমবার আলোচনার পরই আগামী সপ্তাহে হাট বন্ধ থাকবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তরফে এই সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার মঙ্গলাহাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ শুরু করেন হাট ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের যুক্তি ছিল, যে জায়গায় মঙ্গলাহাটটি বসে তার সামনেই রয়েছে হাওড়া জেলা হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্যও শয্যা রয়েছে। হাটে যেহেতু প্রচুর মানুষের সমাগম হয় তাই সংক্রণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। এই আশঙ্কা থেকেই মঙ্গলাহাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু হাওড়া জেলা হাসপাতাল নয়, হাওড়া পুরসভা, হাওড়া থানা, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর, জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারের দফতরের মতো বিভিন্ন সরকারি দফতরের সামনে কীভাবে কোভিড বিধি না মেনে মঙ্গলাহাটে ভিড় হচ্ছে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে।