উলুবেড়িয়া: রাত ন’টা। দশম শ্রেণির ছাত্রী টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিল। অন্ধকার গলিতে মেয়েকে ঘিরে ধরেছিল কয়েকজন যুবক। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। মদ্যপ সেই যুবকদের ‘মারে’ মেয়ের সামনেই প্রাণ গেল বাবার। ভয়ঙ্কর অভিযোগ হাওড়ার (Howrah) শ্যামপুরে। মেয়ের শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের পিটুনিতে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। শ্যামপুর (Shyampur) থানায় ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তারা সকলেই পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার শ্যামপুরের দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রী গৃহ শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে ফিরছিল। রাত ন’টা নাগাদ পাশের পাড়ার রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছিল সে। সেই সময় বাড়ির কাছাকাছি তিন যুবক মদ্যপ অবস্থায় তার পথ আটকায়। নিগৃহীত ছাত্রীর অভিযোগ, তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ছাত্রীর বয়ান অনুযায়ী, চিৎকার চেঁচামেচি করে ছাত্রী কোনওরকমে তাদের হাত ছাড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর ছাত্রী বাড়ি ফিরে তার বাবাকে সবটা জানায়। তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই এলাকায় যান। অভিযোগ, তখনও সেখানে বসে মদ্যপান করছিল অভিযুক্তরা। প্রতিবাদ করায় ওই তিন মদ্যপ যুবক তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে মাঠের মধ্যে বেধড়ক পেটাতে থাকে। বাঁশ, লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারা হয় বলে অভিযোগ।
চিৎকার শুনতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ছুটে যান পরিবারের সদস্যরাও। অভিযুক্তরা রক্তাক্ত অবস্থায় ওই প্রৌঢ়কে মাঠে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় ঝুমঝুমি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা উলবেড়িয়া মহাকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। এরপর সোমবার বিকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় মদ বিক্রি বেলাগাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, পুলিশের মদতে মদের ঠেক চলছে শ্যামপুরে। আর সেই মদের ঠেকে সন্ধ্যা হলেই বাইরের দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গাড়ছে। সন্ধ্যার পর ওই এলাকা দিয়ে চলাফেরা করাই দায় হয়ে ওঠে এলাকাবাসীদের।
নিগৃহীত ছাত্রী বলে, “ওই রাতে আমি পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। সে সময় কয়েকজন আমাকে বাড়ির সামনে সাইকেল দাঁড় করিয়ে দেয়। আমি বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে থাকি। বাবা ছুটে আসে… ওরা বাবাকে মারতে মারতে মাঠের দিকে নিয়ে যায়। ওরা বাবাকে হুমকি দিচ্ছিল, তোর মেয়ে তো পরের দিন পড়তে আসবে, দেখে নেব।” ছাত্রীর মা বলেন. “আমার মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়েই স্বামী চলে গেল। ওর বাবা মেয়ের চিৎকার শুনতে পেয়েই যায়। আমার স্বামীকে মাঠে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মেরেছে। পেটে বাজেভাবে লাথি মেরেছে। এলোপাথাড়ি লাথিতেই মরে গেল ও। ওকে মাঠে ওভাবেই মেরে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল।”
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এখানে মদের ঠেক প্রচুর। পুলিশ পদক্ষেপ করবে কিনা, সেটা তাদের ব্যাপার। দোষীদের শাস্তি হোক, এটাই চাই।” অভিযুক্ত তিন জনই পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আপাতত একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।