নদিয়া: সুযোগের অভাব নেই। মেধার অভাব নেই। কিন্তু, অভাব রয়েছে একটাই। বন্ধুত্বের। অভাব রয়েছে কারোর হাত ধরার। প্রদীপের আলোর তলার সেই অন্ধকারকেই যেন মৃত্যু দিয়ে দেখিয়ে গেলেন কলকাতা আইজারের গবেষক শুভদীপ রায়। কিন্তু তিনি একা নন, এই অন্ধকারে আগেও হারিয়েছে তরুণ প্রাণ। যেমনটা হয়েছিল ২০১৭ সালে।
২০১৬ সালে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সবে স্নাতকে পা। কলকাতা আইজারের কল্যাণীর ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছিলেন সাগর মণ্ডল। ২০১৭ সালের পয়লা মে। ক্যাম্পাসে হস্টেলের বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় ১৮ বছরের তরতাজা সাগর মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ। ওইটুকু বয়সে কেন এমন চরম সিদ্ধান্ত? সহপাঠীরা জানিয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তপশিলি ছাত্র সাগর মণ্ডল বাংলা মিডিয়ামের পড়ুয়া ছিলেন। তাই স্নাতকে ইংরেজিতে সমস্যা হত। উচ্চশিক্ষায় তাই ক্রমশ মানসিক চাপ বাড়ছিল। ভয় পেতে শুরু করেছিলেন সাগর। প্রতিষ্ঠানের চিকিত্সকই তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু, সেই সুযোগ হল কই। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিও পরবর্তীকালে রিপোর্ট দেয়, মানসিক অবসাতে ভুগতেন সাগর মণ্ডল।
দেশের এত বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে পড়ুয়াদের মনের ভাব বোঝার মতো কী কেই নেই? জীবনের শুরুতেই কেন হতাশায় ডুবে যেতে হবে? কলকাতা আইজারের পড়ুয়াদের অভিযোগ, পড়াশোনার বাইরে ক্যাম্পাসে কিছুই নেই। কঠিন সময় হাত ধরার মতো কেই নেই। চারপাশে শুধুই হতাশা।
আইজারের গবেষক শুভদীপ রায়ের মৃত্যুতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে প্রথম থেকেই। গত সোমবার গবেষকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ। তবে এখনও অভিযুক্ত গাইড চিরঞ্জীব মিত্রকে গ্রেফতার হননি। এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি। যদিও ডিরেক্টর সৌরভ পাল বলেছেন, “ফ্যাক্ট চেকিং টিম তৈরি করা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। আমরা পুলিশকে তদন্তে সবরকম সাহায্য করব। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনার প্রতিবাদে কল্যাণীর ক্যাম্পাসের গেটে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।