জলপাইগুড়ি: পেরিয়ে গিয়েছে গোটা একদিন। কিন্তু খোঁজ মেলেনি জেলাশাসকের বাংলো থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে তিস্তা উদ্যানে আসা ভাল্লুকটির। মঙ্গলবার সকাল ৭ টা নাগাদ পার্কে ঢুকেছিল ভাল্লুকটি (Bear)। বাধ্য় হয়েই এ বার ভাল্লুকের খোঁজে ড্রোন চালাল বনদফতর।
বনদফতর সূত্রে খবর, গত ৩০ ঘণ্টা ধরে জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর চর-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও বুধবার বিকেল পর্যন্ত ভাল্লুকটির কোনও সন্ধান না পেয়ে অবশেষে এদিন বিকেলেই ড্রোন চালিয়ে তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেয় গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন।
ঘটনায়, গরুমারা ডিভিশনের ডিএফও অংশু যাদব বলেন, “আমরা উচ্চক্ষমতাসমপন্ন ড্রোন দিয়ে তিস্তা নদীর অনেকাংশেই তল্লাশি চালিয়েছি। ড্রোন থেকে পাওয়া ভিডিয়োতে ভাল্লুক বা অন্য কোনও বন্যপ্রাণীর ছবি পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা সতর্ক রয়েছি। সকলের কাছেই বিশেষ অনুরোধ কোনওভাবে যদি ভাল্লুকটিকে দেখতে পাওয়া যায় তবে আমাদের দ্রুত খবর দিন। অযথা গুজব ছড়াবেন না।”
প্রসঙ্গত, এই ভাল্লুকটিকে ধরার চেষ্টা চলছেই। মধু পাউরুটির টোপ দিয়ে হোক বা অন্য কোনওভাবে, কোনওকিছুতেই ভাল্লুকবাবাজির দেখা মেলেনি। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার থেকে। ওইদিন সকালে জেলাশাসকের বাংলো থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে তিস্তা উদ্যানে অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখতে পান উদ্যানে কর্তব্যরত বনকর্মীরা। দুপুরে পায়ের ছাপটি পরীক্ষার পর বনকর্তাদের একাংশ নিশ্চিত প্রাণীটি ভাল্লুক।
এরপরই তার খোঁজে গোটা উদ্যান জুড়ে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়। পাশাপাশি জেলা শাসকের বাংলোর ভিতরেও তল্লাশি চালান বন-কর্মীরা। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাণীটির হদিশ পায়নি বন দফতর।
জলপাইগুড়ি তিস্তা উদ্যানে রক্তমাখা পায়ের ছাপটি যে ভাল্লুকের তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বনকর্তারা। যদিও এব্যাপারে ক্যামেরা সামনে সরাসরি কিছু না জানালেও, সোমবার রাতে তিস্তা উদ্যানে ভাল্লুক এসেছিল তা ধরে নিয়ে আগামী কয়েকদিনের জন্য তিস্তা উদ্যান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদফতরের উদ্যান ও কানন শাখা। পাশাপাশি তল্লাশি জারি রাখতে তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় আরও কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও এলাকায় আরও কয়েকটি হ্যালোজেন লাইট আজকের মধ্যে লাগানোর নির্দেশ দেন বিভাগীয় বনাধিকারিক অঞ্জন গুহ।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি ডুয়ার্সে ভাল্লুক এসেছিল। যার মধ্যে একটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে এলাকাবাসী। তার দুদিন পর ফের আরও একটি ভাল্লুক উদ্ধার হয়। আর এতেই বনকর্তাদের সন্দেহ এই ভাল্লুকটি কোনও ভাবে দলছুট হয়ে কয়েকদিন ধরে তিস্তা পারের নির্জন এলাকায় ঘোরাফেরা করছে।
এর আগে গত ১৪ ই নভেম্বর তিস্তা পার ধরে জলপাইগুড়ি শহরে এসেছিল দুটি হাতি। তিস্তা পারে হাতির বিষ্ঠা বা প্রস্রাবের গন্ধ পেয়ে সেই পথ অনুসরণ করে ভাল্লুকটি জলপাইগুড়ি শহরে এসে পড়তে পারে বলে অনুমান বনকর্তাদের। তাই যে কোনও ভাবে ভাল্লুকটিকে খুঁজে পেতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো বনদফতর।
অপরদিকে কচিকাঁচাদের নিয়ে তিস্তা উদ্যানে বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছু পরিবার। কিছু পরিবার এসেছিল ভাল্লুক দেখতে। কিন্তু ভাল্লুকের আতঙ্কে পার্ক বন্দ থাকায় তারা পার্কে ঢুকতে পারেনি। ফলে তারা বাড়ি ফিরে যায়।
ঘটনায় বনদপ্তরের উদ্যান ও কানন শাখার বিভাগীয় বনাধিকারিক অঞ্জন গুহ বলেন পাগ মার্ক দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এটি ভাল্লুকের পায়ের ছাপ হতে পারে। তাই নিশ্চিত হবার জন্য পাগ মার্কের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই আমরা পার্কে আসা মানুষ জনের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও খামতি রাখতে চাইছি না। তাই আরও সিসিটিভি ক্যামেরা এবং আরও লাইট লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুততার সাথে সেগুলি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসাথে তল্লাশিও চলবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: Book Fair in Siliguri: মিলছে না টিকা? চিন্তাই করবেন না, বইমেলাতেই রয়েছে সমাধান