জলপাইগুড়ি: তাঁরই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করে জিআরপি (GRP)। তাঁরই অভিযোগের ভিত্তিতে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় (Bikaner-Guwahati Express Train Accident) ইতিমধ্যেই চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ওই ট্রেনে সফরকারী যাত্রী উত্তম রায়। TV9 বাংলাকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পুলিশ নিজের মতই অভিযোগ লিখে নিয়েছে। তাঁর কথা শোনার প্রয়োজনও বোধ করেনি।
উত্তমবাবুর কথায়, “ট্রেন থেকে আমার ৭০ হাজার টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে। আমার ছেলেটার মাথা ফেটে গিয়েছে। আমায় ডেকে বলা হয়েছিল, কোনও অভিযোগ থাকলে করতে। আমি ভেবেছিলাম, এভাবে হয়ত আমার হারানো টাকাটা ফেরত পাব। আমার ছেলেটার মাথাও যে ফেটে গিয়েছে তার চিকিৎসা হবে। তাই, অভিযোগ দায়ের করলাম। কিন্তু, আমায় বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পুলিশ নিজের মতো এফআইআর লিখেছে। খালি, সই করিয়ে নিয়েছে আমায় দিয়ে। এছাড়া আর কিছুই করেনি। পুলিশ নিজের মতোই সবটাই সাজিয়ে নিয়েছে।”
কী লেখা হয়েছিল ওই এফআইআরে? লিখিত ওই অভিযোগে নথিবদ্ধ করা হয়েছে, নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়ার পরে কোচবিহারের দিকে যাওয়ার পথেই ট্রেনটি অত্যন্ত জোরে চলতে শুরু করে। তারপরেই হঠাৎ জোরে ব্রেক কষে চালক। তারপরেই ট্রেনের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।
যদিও চালক প্রদীপ কুমার বলেন, “তখন ৪টে বেজে ৫২-৫৩ মিনিট হবে। আচমকাই একটা ভীষণ ঝাঁকুনি অনুভব করি। তারপরই এর্মাজেন্সি ব্রেক কষি। পিছনে কী হচ্ছে, আমার পক্ষে জানাটা সম্ভব ছিল না। যখন দেখি, তখন পিছনের ৬ চাকা লাইনচ্যুত হয়েছিল। কারণ আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ট্র্যাকশন মোটর খোলা ছিল কিনা, সেটা জানা আমার পক্ষে কোনওপক্ষেই সম্ভব নয়।”
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ নিজেই জানিয়েছিলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার, ওই ট্রেনের চালক প্রদীপ কুমার আলিপুরদুয়ার ডিভিশনাল রেলওয়ের ম্যানেজারের কার্যালয়ে যান। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। কী কারণে, কী ভাবে দুর্ঘটনা, জানতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে রেল।
শনিবার থেকেই রেললাইন মেরামতির কাজ শুরু হয়। চলে, ট্রেনের ট্রায়াল রানও। তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগিগুলিকে এখনও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেগুলি লাইনের একপাশেই পড়ে রয়েছে। এখনও চলছে মেরামতির কাজও।
বৃহস্পতিবার বিকেলে, আচমকাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে উত্তরবঙ্গে। দুর্ঘটনার সময় ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে চলছিল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। দুর্ঘটনায় দেখা যায়, ট্রেনের বগিগুলো খেলনা গাড়ির মতো একে অপরের ওপর উঠে পড়েছে। এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত প্রায় ৪৪ জন। তাঁদের সকলকেই তৎক্ষণাৎ জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি ভর্তি করা হয়। অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরে যান। কিছুজন এখনও চিকিৎসাধীন।