জলপাইগুড়ি: অবশেষে কাটল জট। মালবাজারে ধুপগুড়ির জমিজট কাটার আশা দেখা দিল। ফোর লেন বাইপাসের জন্য জমি মাপার অনুমতি দিল প্রশাসন। তবে কৃষকরা এখনই জমি দিচ্ছেন না।
চাষিরা জানিয়েছেন, ন্যায্যমূল্য পেলেই জমি দেবেন। ধূপগুড়ির ভেমটিয়া থেকে খলাইগ্রাম পর্যন্ত বাইপাস তৈরির জন্য চারশো মিটার দমি মাপলেন হাইওয়ে অথরিটির। ১৯ নভেম্বর জমি মাপতে গিয়ে চাষিদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। জমিতে ব্যানার টাঙিয়ে আন্দোলন শুরু হয়।
শুক্রবার নিরাপত্তার কারণে ধূপগুড়ি থানার আইসি সুজয় তুঙ্গার নেতৃত্বে পুলিশ ছিল। উপস্থিত ছিলেন ধূপগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান রাজেশ কুমার সিং। ১৯ তারিখের পর একাধিকবার জেলা প্রশাসন অনিচ্ছুক চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর, তাতেই জমিদাতারা একটু নরম হয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলন মোড় নিয়েছিল এক রাজনৈতিক লড়াইয়ে। তখন রাজ্যে বিরোধীর ভূমিকায় থাকা তৃণমূল এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। এখন রাজ্য শাসন করছে সেই দল। প্রায় ১৪ বছর আগে সেই আন্দোলনের মতো যেন এক ক্ষেত্র তৈরি হয় জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে! রাস্তা তৈরির জন্য কৃষকরা জমি দিতে অস্বীকার করেছিলেন আগেই। তারপর তাঁরা গড়ে তোলেন জমিরক্ষা কমিটি।
ফোর লেন রাস্তা তৈরি হবে। তার জন্য লাগবে জমি। কিন্তু নিজেদের চাষাবাদের জমি কিছুতেই ছাড়তে চান না কৃষকরা। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে অনিচ্ছুক কৃষকদের আন্দোলন শুরু হয় ধূপগুড়িতে। জমি দিতে তাঁরা অস্বীকার করেছিলেন আগেই কৃষকরা আগেই, চলছিল পালা করে জমি পাহারা দেওয়ার কাজ। তারপর চাষের খেতে রীতিমতো পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন করে শুরু হয় আন্দোলন।
ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেন কৃষকরা। খলাইগ্রাম এলাকার ফোর লেন রাস্তার কাজের জন্য যে কৃষি জমি অধিগ্রহণের কথা বলেছিল প্রশাসন, সেই জমিতেই দেখা যায় পোস্টার ও ব্যানার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনিচ্ছুক কৃষকরা। বলে রাখা প্রয়োজন, এর আগে এই জমি পুলিশকে নিয়ে মাপতে আসেন হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেই সময় কৃষকদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা যায় মহিলাদের। পরে সেই জমি রক্ষাতেই পোস্টার লাগানো হল জমিতে। কৃষকদের পরিষ্কার কথা, ‘জান দেব তবু জমি দেব না’। যদিও প্রশাসনের দাবি, ফোর লেন রাস্তার জমিজট মিটে গিয়েছে অনেকটাই। খুব দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে জয়ন্ত ঘোষ ও রমাপ্রসাদ বসাকের মতো জমি মালিকরা জানান, জমির সমস্যা শুধুমাত্র ৬০০ মিটার নয়। ভেমটিয়া থেকে খলাই গ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার রাস্তায় সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা মিথ্যে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। জানান, “আমরা জমি দিব না, তাই ভূমি রক্ষা কমিটি করেছি, এখন আমরা পালা করে জমি পাহারা দিচ্ছি যাতে জমিতে আসতে না পারে। তাই জমিতে ব্যানার লাগিয়ে প্রশাসন কে জানিয়ে দিলাম, আন্দোলন নতুন করে শুরু করছি’।
ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক রাজেশ কুমার সিং অবশ্য দাবি করেন, জমির সমস্যা মিটে গিয়েছে। শুধুমাত্র ৫০০ মিটার রাস্তার জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। গত ১৯ নভেম্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক, সেটা কেউ চান না বলে জানান রাজেেশ বাবু। অবশেষে সেই জট কাটতে চলেছে বলেই খবর প্রশাসন সূত্রে।