জলপাইগুড়ি: তীব্র দাবদাহ থেকে শিক্ষা নিল পুরসভা। এবার থেকে যে কোনও ভবন পরিকল্পনা (বিল্ডিং প্ল্যানিং) করার সময় ছায়া দান করা গাছ লাগানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা না ছাড়া থাকলে পাশ হবে না প্ল্যান। সবুজায়নের পরেই কংক্রিটের সভ্যতাকে মান্যতা দেওয়া হবে। ঘোষণা করল জলপাইগুড়ি পৌর কর্তৃপক্ষ।
শনিবার জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে বনমহোৎসবের উদ্ধোধন হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের অতিথিরা সকালে একটি শোভাযাত্রা করেন। এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠান করে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের চারাগাছ তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা বর্মণ, উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর, পৌরসভার চেয়ারম্যান পাপিয়া পাল, ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জী, জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ বিভিন্ন অতিথিরা।
শনিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বক্তাদের একটাই কথা ছিল তা হল গত দশ দিন ধরে চলা জলপাইগুড়ির ভয়াবহ দাবদাহ। জলপাইগুড়ি আবহাওয়া এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে, যে এই প্রথম লাগাতার কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই করছে।গরমের দাপটে নাজেহাল জেলার মানুষজন। এই সমস্যা থেকে এখন শিক্ষা না নিলে আগামীদিনে ভয়াবহ চেহারা নেবে আবহাওয়া। এর থেকে বাঁচার একটাই উপায় বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। কারণ গাছই পারে এই দাবদাহ থেকে মানুকে বাঁচাতে।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে জলপাইগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জীর করা দাওয়াই, এখন থেকে নতুন বিল্ডিং এর প্ল্যান পাশ করাতে হলে বাড়িতে ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ লাগানোর জায়গা ছাড়া না থাকলে সেই প্ল্যান পাশ করা হবে না। একই সঙ্গে বহুতলের ক্ষেত্রে যত তলা বিল্ডিং হবে নূন্যতম ততগুলি ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে। নইলে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করা হবে না।
মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানিয়েছেন সবুজের আচ্ছাদন বাড়াতে বনদফতরের পক্ষ থেকে জেলায় বনমহাৎসব পালন করা হচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহভর চলবে এই অনুষ্ঠান। এই কয়েকদিনে জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ১ লক্ষ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বনদফতরের পক্ষ থেকে।
বস্তুত, জলপাইগুড়ি জেলা আগাগোড়াই সবুজ জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। আগে সংশ্লিষ্ট এই জেলায় গরম খুব একটা দেখা যেত না। একদিন গরম হলেই তার পরের দিন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যেত। ফলে বন, জঙ্গল গাছ গাছালি দিয়ে ভরা এই জেলার আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত মনোরম। এরপর ৯০ এর দশকের শেষ দিক থেকে নগরায়ণ শুরু হয়। ছোট-ছোট জায়গায় শুরু হয় ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি। বিভিন্ন যায়গায় গাছ কেটে শুরু হয় বহুতল বা শপিং মল নির্মাণের কাজ। এরফলে ক্রমেই শহরাঞ্চল থেকে উধাও হতে থাকে সবুজের আচ্ছাদন। বর্তমানে যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে শহরবাসীকে।