জলপাইগুড়ি: চা বাগানের ভিতর নালা। সেই নালার ধার থেকে উদ্ধার হল সদ্যোজাত শিশু। বুধবার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় ময়নাগুড়িতে। গায়ে রক্তমাখা অবস্থায় চা বাগানের নালার ধারে পড়েছিল একরত্তি। ধবধবে গায়ের রং, মাথা ভর্তি চুল, আদুল শরীর। সেই ছোট্ট গায়ে চাপ চাপ রক্ত লেগে, ময়লাও মাখা। কে বা কারা কেন এই শিশুপুত্রকে এভাবে ফেলে রেখে গেল তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে শিশুটি প্রিম্যাচিওর। তাকে হাসপাতালে আনার পরই স্পেশাল নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটস (SNCU)-এ রেখে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
ময়নাগুড়ি ব্লকের পদমতি ১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের নয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নীতীশকুমার রায় ও কবিতা রায়। এই দম্পতি পেশায় চা শ্রমিক। তাঁরাই রক্তমাখা অবস্থায় চা বাগানের নালার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন একরত্তি সদ্যোজাতকে। রায় দম্পতির চিৎকার শুনে ছুটে আসেন অন্যান্যরা। বাচ্চাটিকে তুলে দেখেন তখনও ছোট্ট হৃদযন্ত্রটা ধুকপুক করছে। আর কোনও দিকে না তাকিয়ে শিশুটিকে নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের পথে ছোটেন ময়নাগুড়ির এই দম্পতি।
জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ কবিতা রায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকাই তিনি শুনতে পান চা বাগানের দিক থেকে ভেসে আসছে শিশুর কান্নার আওয়াজ। এরপর তিনি কৌতূহল বশত চা বাগানের ভিতর এগিয়ে গেলে দেখতে পান একটি সদ্যোজাত সন্তান চা বাগানের নালার ধারে জঞ্জালের স্তুপের উপর পড়ে আছে। ছোট্ট শরীর, হাত পা একেবারে ঠান্ডা বরফের মতো। কিন্তু এরইমধ্যে থেকে থেকেই কেঁদে উঠছে সে।
গায়ে ময়লা, রক্তের ছোপ। পিঁপড়ে ঘুরছে। এরপরই চিৎকার করে ওঠেন কবিতা রায়। দৌড় লাগান বাড়ির পথে। স্বামীকে ডেকে আনেন। বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন একটি কাপড়ও। নোংরা সরিয়ে শিশুটিকে কোলে তুলতেই দেখেন একটি পুত্রসন্তান। কোনও কিছু চিন্তা না করে বাচ্চাটির প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার অলিরানি দাস শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে নেন। বর্তমানে শিশুটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএনসিইউয়ে নিয়ে যান। কথা বলেন ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গেও।
চা শ্রমিক নীতীশকুমার রায় বলেন, “আমার স্ত্রী বাচ্চাটিকে দেখতে পেয়ে আমাকে ডাকে। এরপর আমি গিয়ে দেখি সদ্যোজাত পুত্রসন্তান। সারা গায়ে রক্ত ও ময়লা লেগে আছে। এরপর আমি বাড়ি গিয়ে কাপড় এনে তা জড়িয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিই। এরপর গাড়ি ভাড়া করে সোজা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।”
হাসপাতালের চিকিৎসক অলিরানি দাস বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকরা জানালেন বাচ্চা পড়েছিল। ওরা পুলিশকে কিছু না জানিয়েই আগে বাচ্চাটাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মানবিকতার খাতিরেই ওরা এটা করেছে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটাকে স্পেশাল নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটস-এ রাখি। ওয়ার্ড মাস্টারকেও সবটা বলা হয়। যারা বাচ্চাটিকে নিয়ে এসেছিল, ওদের বলা হল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরাও ওয়ার্ড মাস্টারের মাধ্যমে থানায় যোগাযোগ করি। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হল প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি। আমাদের কাছে যখন নিয়ে আসে একেবারে সারা গায়ে ময়লা মাখা। মনে তো হচ্ছে কেউ ফেলে দিয়ে গিয়েছে। ঘণ্টাখানেক পার হয়ে গেলেও কেউ এসে দাবি করেনি।”
আরও পড়ুন: Howrah: ‘একজনের সঙ্গে বেরিয়েছি’, কিছুক্ষণ পরেই বাড়িতে হাজির পুলিশ, ছেলের খবরে শিউরে উঠলেন মা