জলপাইগুড়ি: থরে-থরে গাছ। আর তাতে ঝুলছে অতি সুস্বাদু কিউই ফল (Kiwi fruit)। কিন্তু কেনার লোক নেই। বিদেশী এই ফল চাষ করে মাথায় হাত কৃষকদের। কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লকের দূরখোলা গ্রাম। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে এই এলাকার ২০ টি কৃষক পরিবারের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল কিউই (Kiwi fruit) ফলের কয়েকশো চারা গাছ স্বল্প মূল্যে নাবার্ডের পক্ষ থেকে বিলি করা হয়।
সেই সময় পাহাড়ি এই ছোট্ট গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের চিরাচরিত স্কোয়াশ,ভুট্টা, ফুল, কফি, বাঁধা কফি, মুলো ইত্যাদি চাষ ছেড়ে দেন। এরপর ওই ২০ কৃষক কিউই ফলের চাষ শুরু করেন। ৩ বছর পর থেকে খুব ভাল ফলন শুরু হয়। কিন্তু এত ভাল ফলন হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। কারণ উৎপাদিত ফল বিক্রি করতে না পেরে পথে বসার জোগাড় ওই কৃষকদের। গত ৩ বছর ধরে চলা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
জানা গেছে কিউই এমন একটি ফল যা অত্যন্ত উপকারি। বাজারে তার তেমনই চাহিদা। জলপাইগুড়ি শহরের বাজারে এই কিউই ফল কখনও-কখনও কেজি প্রতি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মিষ্টি ফলটি দেখতে অনেকটা আলুর মতো। ভেতরটা সবুজ হয়। চিনকে কিউই ফলের জন্মভূমি মনে করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে এর চাষ ও উৎপাদন যথেষ্ট। নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল এই কিউই।
এই ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় নিয়মিত খেলে হার্ট ও কিডনি খুব ভাল থাকে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ফল বলে জানিয়েছেন ডায়েটিশিয়ানেরা।
ফলে দিন দিন এই ফলটির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এই বাড়তি চাহিদার দিকে নজর রেখে রাজ্যের কৃষি দফতর কিউই চাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই ফল চাষ করে আয় অনেকটাই বাড়বে বলে জানিয়েছিল। তাঁদের সেই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ২০১৭ সালে গরুবাথান ব্লকের দূরখোলা গ্রামের জনা কুড়ি কৃষক কিউই চাষ শুরু করেন।
এই অসহায় কৃষকদের অন্যতম ফিরোজ মুখিয়া। তিনি দাবি করে বলেন, কালিম্পংয়ে চাষ হওয়া কিউই ফল স্বাদে-মিষ্টতায় সেরা। তবু সেই ফল বিক্রি হচ্ছে না। অনেক আশা নিয়ে তাঁরা তাঁদের চিরাচরিত চাষবাস বাদ দিয়ে এই বিদেশী ফলের চাষ করেছিলেন। সফল হয়েছেন। এখন প্রচুর সুস্বাদু ফল হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি করার জায়গা নেই। তাই তাঁরা এর বিপননের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ঘটনায় গরুবাথানের বিডিও শৌভিক বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বিষয়টি তার নজরে আছে। এই বিষয়ে কৃষি দফতরের অ্যাগ্রো মার্কেটিং ডিভিশনের সঙ্গে কথা বলে বিপননের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।