ময়নাগুড়ি : রিভার মনস্টার। কথাটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। বিশালাকার মাছ। মাছ তো নয়, যেন ‘জলদৈত্য’। সেই সুবিশাল চেহারার জন্যই এমন নামে ডাকা হয় এদের। বিদেশের বিভিন্ন জলজ প্রাণী বিষয়ক তথ্যচিত্রগুলিকে মাঝে মধ্যেই এই রিভার মনস্টারের কথা উঠে আসে। এদের নিয়ে অতীতে অনেক তথ্যচিত্রই হয়েছে। কিন্তু এবার এই বিশালাকার ‘জলদৈত্য’র খোঁজ মিলল তিস্তায়। তিস্তায় ধরা পড়ল এক রিভার মনস্টার। আর সেই কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। যে মাছটি ধরা পড়েছে, তাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বাঘা আড় মাছ। ওজন প্রায় ৮০ কিলো। একটা ডিঙি নৌকার অর্ধেকের বেশি জায়গা লেগে গিয়েছে, মাছটিকে নিয়ে আসার জন্য। তারপরও একজনের পক্ষে এই মাছকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মাছটিকে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দু’পাশে দু’জন ধরে নিয়ে এসেছেন বাজার পর্যন্ত। তাতেও হিমসিম খাওয়ার জোগাড়।
রবিবারই আবার জামাইষষ্ঠী। এই সুবিশাল আকারের মাছ কি আর রোজ রোজ ওঠে? জামাইষষ্ঠীর ভরা বাজারে তাই এমন মাছ বিক্রি হতে বেশি সময় লাগে না। একটি মাছ বিক্রি করেই প্রায় ৪০ হাজার টাকা ঘরে তুললেন জেলেরা। ময়নাগুড়ি দোমহনী এলাকার বাসিন্দা বাসু দাস ও ভীম দাস। পেশায় মৎস্যজীবী। শুক্রবার রাতে তিস্তা নদীর উপর রেল সেতুর পিলারের কাছে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময় আচমকাই তাঁদের জালে কোনও ভাবে আটকে যায় এই বিশালাকৃতির বাঘা আড় মাছটি। কিন্তু তখন গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ওই মাছটিকে ডাঙায় তুলতে পারেননি। তখনকার মতো মাছটিকে জালে পেঁচিয়ে পিলারে বেঁধে রেখে আসেন তাঁরা।
শনিবার দিনের আলো ফুটলে, তাঁরা ফের চলে যান রেল সেতুর পিলারে। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় মাছটিকে ডাঙায় তুলে আনতে সমর্থ হন। তারপর বাঁশ দিয়ে বেঁধে ঘাড়ে করে ময়নাগুড়ির পাইকারি মাছ বাজারে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে নিলাম হয় মাছটির। দর ওঠে ৫০০ টাকা প্রতি কিলো। উল্লেখ্য, তিস্তা নদীতে মাঝে মধ্যেই ধরা পরে বাঘা আড় মাছ। তবে সেগুলির ওজন কমবেশি ২৫-৩০ কেজির মধ্যেই থাকে। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছটির বাজারে চাহিদা প্রচুর। তবে এত বড় আকারের এবং এত বিশাল ওজনের বাঘা আড় মাছ সাধারণত বছরে দু’চারটির বেশি ধরা পড়তে দেখা যায় না।
বাঘা আড় মাছ আসলে কী? হুগলি জেলার সিঙ্গুরের বাসিন্দা মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুমিত মিত্র জানিয়েছেন, স্থানীয় নাম বাঘা আড় হলেও আসলে এটি বোয়াল গোত্রের মাছ। এরা রিভার মনস্টার। এরা দলবদ্ধ হয়ে থাকে। মাছ খায়। তবে এত বড় মাছ কোনও জায়গা থেকে ভেসে আসেনি বলে মত তাঁর। সুমিত বাবুর মতে, এই মাছটি এই এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে ছিল। নদীর জল বাড়ায় কোনওভাবে বাইরে এসেছে। এই বাঘা আড় মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Wallago attu। এগুলি হল এক ধরনের ক্যাটফিশ। সাধারণত মিষ্টি জলের পাওয়া যায় এগুলিকে।