ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের শুরুতেই সাহিত্যিক, শিল্পী, খেলোয়াড় সহ আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ট জনদের সম্বর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম জেলার একাধিক কর্মসূচির সূচনা করেন। তার পর জেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তিনি। বেলপাহাড়ি থানার আইসি-র কাছে তিনি জানতে চান ঝাড়গ্রাম জেলার সীমানার অবস্থা। এর পরই মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টারের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার দিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি আগেও করেছিলেন। যদিও এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে পোস্টার বিষয়টি বলার সময় বিজেপি-র প্রসঙ্গ তোলেননি তিনি।
বেলপাড়াহি থানার আইসি-র থেকে ঝাড়গ্রামের সীমানার ব্যাপারে জানতে চান তিনি। সীমানা দিয়ে বাইরের কেউ ঢুকছে কি না তাও এ দিন জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সীমানা এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন আইসি। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, “সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বেরোবেন না। কোনও থানা থেকে কি এ রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?” মুখ্যমন্ত্রীর এই জিজ্ঞাসার পরই নিঃশব্দ হয়ে যায় গোটা হল ঘর। একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন সেখানে উপস্থিত আধিকারিকরা। তার পর জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তরের আধিকারিকরা একযোগে জানিয়ে দেন, প্রশাসনের তরফে এ রমক কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এর পর মমতা বলেন, ‘‘তার মানে এটা খুব গোপনে কেউ গুজব ছড়িয়েছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য। মাথায় রাখবেন, কেউ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নেটমাধ্যমেও নজর রাখবেন। কারণ নেটমাধ্যমে যেমন ভাল লোক আছেন, তেমন অনেকে প্ররোচনাও দেয়। কেউ দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টাও করে। আবার মাওবাদীদের নাম করে মিথ্যা কথাও বলে যে, ‘মাওবাদী আসছে, মাওবাদী আসছে।’ কেউ নিজে একটা হাতে পোস্টার লিখল। অনেকে আবার সেই পোস্টারের ছবি তুলে ছড়িয়ে লোকের মধ্যে আতঙ্ক রটিয়ে দিল।’’
সম্প্রতি জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের নামে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সে জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা। এই কাজের জনকে সে জেলার পুলিশ সম্প্রতি ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুলিশকে আদিবাসী জনজাতির মহিলাদের নিয়ে ‘উইনার্স টিম’ তৈরি করার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে রাজ্যের সীমানার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। বুধবার আত্মসমর্পণকারী এক মাওবাদী এবং মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চার জনকে স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি নিয়োগপত্রও তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে একাধিক কর্মসূচির সূচনা করেন তিনি। এর মধ্য়ে রয়েছে ধড়সা- বেলপাড়াহি ও বেলপাহাড়ি- বাঁশপাড়াহি রাস্তার প্রশস্তীকরণের কাজ। সাঁকরাইল ব্লকের রোহিণীতে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ মেগা ওয়াটের সৌরবিদ্যুত প্লান্ট তৈরির করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সোনামুই, বিবিবেরিয়াত চেকড্যাম ও বড়ধানশাল মৌজাতে সেচবাঁধ তৈরির ঘোষণা করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জলের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত মুখ্য়মন্ত্রী। ওই জেলার সমস্ত বিডিও-কে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন নিজেদের উদ্যোগে ওই এলাকা চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম এলাকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ঘোষণা বুধবাররে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দুপাতার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একে কেন্দুপাতা সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত আদিবাসীরা উপকৃত হবে দাবি মমতার।