AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বাঁধের ওপর আস্তানা, সঙ্গে বাঘের ডাক! আতঙ্কের আরেক নাম কুমিরমারি দ্বীপ

"আপাতত বেঁচে আছি। বাড়ি-ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধান বেধেছিলাম উঠোনে। সেটাও শেষ... মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। আন্ত্রিকও ছড়াচ্ছে। আমরা বাঁধের ওপর শুধুমাত্র দুটো জামা-কাপড় নিয়ে বসে আছি। ঠিক করে খাবারও জুটছে না। জানি না স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারব কিনা।''

বাঁধের ওপর আস্তানা, সঙ্গে বাঘের ডাক! আতঙ্কের আরেক নাম কুমিরমারি দ্বীপ
ইয়াস বিধ্বস্ত উপকূলবর্তী এলাকা
| Updated on: May 30, 2021 | 6:08 PM
Share

তন্ময় প্রামাণিক: এ যেন আতঙ্কের আরেক নাম কুমিরমারি দ্বীপ! অন্তত সুন্দরবনের এই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তাই। আয়লা, আমফানের পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গোটা কুমিরমারি দ্বীপ আজ জলের তলায়। একে তো বাড়ি-ঘর হারিয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় কোনওক্রমে তাঁবু খাটিয়ে নদীর ভাঙা বাঁধের ওপর দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। কিন্তু সমস্যা আর আতঙ্কের যেন শেষ নেই। ঘুম ছুটছে বাঘের আতঙ্কে!

গত বুধবার ইয়াস আসার সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসেই পনেরো থেকে কুড়ি হাজার মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। গোটা কুমিরমারি দ্বীপটাই এখন জলের নিচে। বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় কোনওমতে পলিথিনের তাঁবু খাটিয়ে নদীর ভাঙা বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ। সেখানেই রয়েছেন পরিবারের সব সদস্য। মাথার ওপর ছাদের অবাব, পানীয় জল ও খাবারের জন্য কষ্ট আর তার মধ্যেই ছড়িয়েছে বাঘের আতঙ্ক। নদী বাঁধের একদিকে রয়েছে জলে ডুবে থাকা বাড়িঘর, উঠোন, ধানের গোলা, জমি-পুকুর। আর বাঁধের ঠিক নিচেই শোঁ-শোঁ শব্দ করে বইছে নদীর জোয়ার-ভাটার জল। মাঝেমাঝেই ফুলেফেঁপে উঠছে বাঁকনা নদী। আর তার সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে উল্টো পারের জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে বাঘের তীব্র গর্জন।

এই অবস্থায় জল ঠেলে বাড়ির ছোটদের দূরের গ্রামে কোনও আত্মীয়দের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের লোকজন। একদিকে ঝড়-বন্যায় সর্বস্ব খুইয়ে তাঁবুতে কষ্টের রাত যাপন আর তার মধ্যেই নদীর জলস্তর বাড়া আর বাঘের ডাক, এই সব মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের মতো দিন কাটছে কুমিরমারি দ্বীপের বাসিন্দাদের। সারাদিন বাঁধ বাঁধানোর চেষ্টা, জল-খাবার যোগাড়, সংসারের চিন্তার মাঝে বাঘ আতঙ্কে রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না পুরুষ ও মহিলারা।

যেমন শ্যামলী সরদার। বয়স্কা এই মহিলার কথায়, “এখন তাঁবুর মধ্যে থেকে বাঘের ডাক শুনতে পাচ্ছি। ভয় তো লাগছে। কিন্তু যাব কোথায়? বাড়িঘর সব জলের নিচে। সর্বস্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুকুরের মাছ মরে গেছে। জমিও নোনা জলের তলায়। বাড়ির ছোট সন্তানগুলোকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে আমরা সব পরিবার মিলে এই বাঁধের রয়েছি। জানি না কী হবে…” দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন্তব্য বহু ঝড়-জলের স্বাক্ষী থাকা কুমিরমারি দ্বীপের এই বাসিন্দার।

প্রায় একই সুর শোনা গেল বাবু মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, “আপাতত বেঁচে আছি। বাড়ি-ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধান বেধেছিলাম উঠোনে। সেটাও শেষ… মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। আন্ত্রিকও ছড়াচ্ছে। আমরা বাঁধের ওপর শুধুমাত্র দুটো জামা-কাপড় নিয়ে বসে আছি। ঠিক করে খাবারও জুটছে না। জানি না স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারব কিনা। তার ওপর বাঘের ডাক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।”

আরও পড়ুন: ‘মৃত্যু’র মুখোমুখি! শব্দ শুনে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল, টর্চের আলো ফেলতেই চোখে পড়ে চকচকে কিছু একটা

এভাবেই দুঃস্বপ্নের মতো রাতযাপন করেছেন কুমিরমারি দ্বীপের শয় শয় পরিবার।