মালদা: রাস্তার দু’ধারে পড়ে রয়েছে একের পর এক দেহ। রক্তাক্ত। বোমার অভিঘাতে ঝলসে গিয়েছে কোনও শরীর। সেই দেহ সরিয়েই এগোতে হচ্ছে পথ। কয়েকশো মাইল পেরিয়ে ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরেছেন মালদার ইংরেজবাজারের চণ্ডীপুরের সোহন মহালদার। কিন্তু এখনও চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে ভয়াবহ সে সব স্মৃতি। রাস্তার পড়ে থাকা চাপ চাপ রক্তের দাগ এখনও তাঁর স্মৃতিতে টাটকা। ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি কোনও যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়াবেন তিনি। ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরেছেন বটে, ভয়াবহ স্মৃতিতে স্থবির সোহান।
ইউক্রেনের জ়াপরিজ়হিয়া স্টেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া সোহান। তিনি গত রবিবারই বাড়ি ফিরেছেন। আর সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুঃসহ অভিজ্ঞতা। সোহানের কথায়, “তাও ৬-৭ কিলোমিটার রাস্তা তো হবেই। রাস্তা জুড়ে শুধুই সারি সারি দেহ পড়ে। এগনোর জায়গা নেই। দেহগুলিকে সরাতে হচ্ছে টেনে, তারপর সরু রাস্তা দিয়ে এগনো। আশেপাশে ঘুরছেন সশস্ত্র লোকজন। তাঁরা কারা? ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ নাকি সেনা? নাকি রাশিয়ান সেনা? কিছুই বোঝার উপায় নেই। তবে সকলের চোখেই প্রচণ্ড হিংস্রতার ছাপ।”
কথাগুলো বলার সময়ে সোহানের জিভ জড়িয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা চুপ থেকে আবার বলে চললেন সেই কাটানো দিনগুলোর কথা। তিনি বলেন, “বাঙ্কারে খাবার, জল ছিল। তবে তা কতক্ষণের তা কে জানে। তবে সঙ্গে এক রাশ আতঙ্কও ছিল।” প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো প্রশাসনিক তরফে তাঁদেরকে বার করে আনা হবে। কিন্তু তা হয়নি। অবশেষে নিজেরাই সাহস করে বেরিয়ে রওনা দেন বাড়ির টানে। সাহায্যের কেউ নেই, উলটে ইউক্রেনীয়দের নানান জটিল প্রশ্নের মুখেই পড়তে হয়েছে তাঁদের।
অবশেষে হেঁটেই বর্ডার, পরে বাসে এয়ার পোর্ট। হাঙ্গেরি হয়ে ফেরা দিল্লিতে। তারপর বাড়ি। সোহানের পরিবার স্বস্তিতে। তবে বাড়ি ফিরেও একটা অস্বস্তি ভাব রয়েছে সোহানের মধ্যে। এখনও এক রাশ দেহের কথা ভুলতে পারছেন না তিনি। যুদ্ধ থামলে ফের কি যাবে ইউক্রেনে? উত্তর দিতে পারেননি তিনি। চুপ ছিলেন আর ফেলেছেন দীর্ঘঃশ্বাস।
আরও পড়ুন: Bear cubs Recover: খাঁচার মধ্যে অনবরত ডাকছে ভাল্লুকের বাচ্চা, পরে কাছে যেতেই জানা গেল আসল ঘটনা