মালদা: প্রত্যেক বছর এই মাসটার দিকে তাকিয়ে থাকে ওঁদের ছট্টো ছেলেমেয়েগুলো। দুর্গা পুজোয় নয়, লক্ষ্মীপুজোতে নতুন জামা গায়ে ওঠে ওদের। সঙ্গে ভালোমন্দ খাবারদাবার। বাবা যে শহর থেকে বছরভরের রোজগারটা করে আনেন! কিন্তু সেই ঢাকিদের মুখেই এবার অনিশ্চয়তার ছাপ।
ভ্যাকসিন না মেলায় পুজোয় বরাত বাতিল প্রায় ৩০০ ঢাকির। দুশ্চিন্তায় উত্তর মালদার ঢাকি পরিবারগুলি। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিতে পারেনিন ওঁরা। ফলে শুধু এ রাজ্য নয় ভিন রাজ্যে যেতে গেলে ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট না থাকায় নির্ধারিত কাজ হাতছাড়া হল। কেউ কেউ আবার বায়না নিয়ে ফেলেছিলেন সেই টাকা এখন ফেরত দিতে হচ্ছে।
যদিও কারও কারও পক্ষে তা কীভাবে ফেরত দেবেন, তা বুঝেও উঠতে পারছেন না। কারণ সব টাকাই খরচ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঢাকিদের জন্যে দ্রুত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস চাঁচলের মহকুমা শাসকের।
গত বছর করোনার জন্য অনেক পুজো উদ্যোক্তাই পুজো করেন নি। কেউ কেউ আবার নামমাত্র পুজো সেরে ছিলেন। ফলে মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজানোর বরাত পাননি অনেক ঢাকি। আর এবারের পুজো আসতেই আরেক সমস্যার সম্মুখীন উত্তর মালদা, বিশেষ করে চাঁচলের পাহাড়পুরের ঢাকিরা। পুজোর আগে বরাত এলেও তা ফিরে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন না মেলায় মণ্ডপে কাজের ছাড়পত্র পাচ্ছেন না তাঁরা।
ঢাকিদের দাবি, পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট নিয়ে আসলে তবেই মন্ডপে ঢাক বাজানোর ছাড়পত্র মিলবে। বহু ঢাকি ভিন রাজ্যের পুজোতেও যান। সেখানে মোটা রোজগার হয়। কিন্তু ভিন রাজ্যে যেতে হলে আরও সমস্যা। সব ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিনেশনের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। আর এর ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঢাকিরা।
গত বছরের মতো এ বছরও কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এক জন ঢাকির কথায়, “সারাটা বছর অপেক্ষা করে থাকি। আমাদের অন্য কোনও কাজ নেই। এটাই আমাদের প্রধান কাজ। পুজোর সময়ে মণ্ডপগুলোতে ছুটে ছুটে যাই। আগের বছরও একদম ফাঁকা হাত ছিল। এবারও এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন পাইনি। লাইনে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু কপাল খারাপ। এবার কি আর কেউ আমাদের ডাকবে?”
অন্য এক ঢাকির কথায়, “আগের বছরটা খারাপ গেল। আমরা ভেবেছিলাম এবার সবটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হল না। ভ্যাকসিনও পাই নি। তাই আমাদের কেউ ঢাকছেও না। পুজো উদ্যোক্তারা স্পষ্ট বলে দিচ্ছেন ভ্যাকসিন না পেলে রাখবেন না। তাই চিন্তায় আছি।”
চাঁচলের মহকুমা শাসক কল্লোল রায়, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঢাকিদের ব্যাপারে আমরা সহানুভূতিশীল। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকিদের আলাদা করে একটি তালিকা তৈরির করার। তারপর তাঁদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় হচ্ছি। এব্যাপারে আমরা বিডিও-দের সাহায্য নেব।”