মালদহ: স্বামীর সঙ্গে অন্য মহিলার সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ ছিল স্ত্রীর মনে। সে কারণে প্রায়ই দাম্পত্য কলহও লাগত সংসারে। এরই মধ্যে গলায় ফাঁস লাগানো দেহ উদ্ধার হয় স্ত্রীর। প্রতিবেশীরা প্রথমে এই ঘটনায় ধন্দে ছিল। আসল রহস্য ফাঁস করে মৃতের তিন বছরের সন্তান। প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিশু জানায়, তার মায়ের গলায় বাবা দড়ি পেঁচিয়ে দিয়েছে। এরপরই দু’য়ে দু’য়ে চার করেন স্বজন-পড়শিরা। মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
নিহত ওই তরুণীর নাম মাসতারা খাতুন (২৮)। তাঁকেই গলায় দড়ি জড়িয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। স্ত্রীকে মেরে ঝুলিয়ে দেন বলেও অভিযোগ। রবিউল স্থানীয় সোনাকুলের বাসিন্দা। মাসতারার বাপের বাড়ি ছিল হরিশচন্দ্রপুর থানারই কাওয়ামারি গ্রামে। মাসতারা ও রবিউলের দুই ছেলে। একজনের বয়স তিন, ছোটজন দু’ বছরের।
ক্ষেতখামারির কাজ করেন রবিউল। অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই পাশের গ্রামের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর। মাসতারা তা জানতে পেরে যান। এই নিয়েই শুরু হয় ‘গৃহদাহ’! প্রায়ই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হতো বলে অভিযোগ। আর সেই ঝামেলায় রবিউলের মা-বাবা ছেলেকে ইন্ধন দিতেন বলেও অভিযোগ করেন মাসতারার পরিবারের লোকজন।
নিয়মিত রবিউল স্ত্রীকে মারধরও করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সে বিবাদ চরমে ওঠে। সেই সময়ই স্ত্রীকে রবিউল খুন করে বলে অভিযোগ। আর গোটা ঘটনাটাই হয় তাঁদের তিন বছরের ছোট্ট ছেলের সামনে। ওই শিশুই সকলকে বিষয়টি জানায়। এরপরই হরিশচন্দ্রপুর থানায় খবর দেওয়া হয়। মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। একই সঙ্গে মূল অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম ও তাঁর মা আনোয়ারা বিবিকে আটক করে পুলিশ। বাবা আবদুল বারেক পলাতক।
মাসতারার দাদা নইমুদ্দিন বলেন, “শুক্রবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ভাবেই সারা রাত কাটে। কারণ ভোরে ভাত খেয়ে রোজাও রেখেছিল। জিজ্ঞাসা করে কেন রোজা রাখলি? বলেছিল রোজা বাকি আছে তাই। সকালে এলাকার লোকজন দেখে বোনকে মেরে বাইরে ফেলে রেখেছে। গলা দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা। ওকে মেরেছে প্রথমে। পরে যখন বুঝতে পেরেছে ফেঁসে গিয়েছে! তখন ঝুলিয়ে দেয় মৃতদেহ। বোনের বর কিন্তু অন্য জায়গায় ফেঁসে আছে। ওর সম্পর্ক আছে। আমরা এখানে এসে শুনলাম ওই লোকের সঙ্গে অন্য মেয়ের সম্পর্ক আছে। আমি যেতেই জামাইয়ের বাবা পালিয়ে গেল। জামাই আর বোনের শাশুড়িকে ধরলাম। বলছে, ওরা কিছু জানে না।”
নইমুদ্দিন বলেন, “সে সময় আমার যে ছোট্ট ভাগ্নে রয়েছে তিন বছর বয়স ও বলছে বাবা দড়ি দিয়ে টেনে মারল। আমরা চাই গোটা পরিবারের শাস্তি হোক। ওরা এ ভাবে একটা মেয়েকে মেরে ফেলল! আজ আমাদের মেয়েকে মেরেছে, কাল অন্য কারও ক্ষতি করবে।”
আরও পড়ুন: Body Recover: অসহায় অশীতিপর মায়ের পাশেই পড়ে ছেলের লাশ, তিনদিন ধরে জানতেই পারেনি কেউ!