ভাতার: সংস্কারের কিছুদিন পরে ফের ভর্তি হয়ে যাচ্ছে শুকনো পুকুর। যে জলাধার কয়েকদিন আগেও ধুঁকছিল জলের অভাবে, সেখানে থইথই করছে জল। কীভাবে সম্ভব এটা? এই ‘অলৌকিক’ কাণ্ড সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) ভাতারে। পুকুর পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন কাতারে কাতারে মানুষ। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ভূমসোর ও পাটনা গ্রামের মাঝখানে রয়েছে ঝিংকে নামে ওই পুকুরটি। কিছুদিন আগে পুকুরপাড় সহ দু’বিঘা আয়তনের ওই পুকুরটি মাস দেড়েক আগে থেকে সংস্কারের উদ্যোগী হন পুকুরের মালিকানাধীন ব্যক্তিরা। দিন কুড়ি আগে সংস্কারের কাজ শেষ হয়। তখনও এক বিন্দুও জল ছিল না পুকুরে। বৃষ্টিও হয়নি বিশেষ। এমনকী পার্শ্ববর্তী কোনও নদী-নালার সঙ্গে যোগও নেই পুকুরটির। কিন্তু তারপরেও এই ভাবে জল বাড়ছে কীভাবে? সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে সকলকে।
স্থানীয়দের দাবি, পুকুরের এক কিলোমিটার আশেপাশে কোন জমিতে বোরো চাষ হয়নি এ বছর। গত দু’এক দিনে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাঠজুড়ে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে জলের আশায় হাপিত্যেশ করে বসেছিল এলাকার মানুষ। কিন্তু, আচমকাই, দুই সপ্তাহ আগে সংস্কার হওয়া ওই পুকুর থেকে উঠে আসছে জল। ধীরে ধীরে বুক সমান জলে ভরেছে গোটা পুকুরটি, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। খবর পেয়ে, আশেপাশের গ্রাম থেকেও বহু মানুষ ছুটে আসছেন ওই পুকুরে জল দেখতে। ভাতারের এই ঘটনা দেখে অনেকেই বলছেন এ ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত ‘আশিতেই আসিও না ছবি’-র প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, ভগবানের আশীর্বাদেই জলে ভরেছে এই পুকুর। এমনকী এলাকার অন্যান্য পুকুরের থেকে এই পুকুরের জল অনেক বেশি শীতল আর স্বচ্ছ। তাদের ধারণা এই জল পান করলে সহজেই রোগ ব্যাধি দূর হয়ে যাবে। সেই কারণেই, কেউ বালতি, কেউ বোতলে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন এই ‘অলৌকিক’ জল। তবে এর পিছনে কোনও অলৌকিক কারণ রয়েছে তা মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ভাতার ব্লক কমিটির সভাপতি সিরাজুল হক। তাঁর দাবি, “পুকুরটির আশেপাশের ভৌগলিক অবস্থান, ভূমির গঠন দেখতে হবে। ১০০ মিটার দূর থেকে চুয়ে আসতে পারে ওই জল। তবে এই ঘটনা একদমই অলৌকিক নয়। জলস্তর উপরে থাকলে আর্টিজিও কূপের তত্ত্ব অনুযায়ীও বিষয়টি ঘটতে থাকতে পারে”। প্রসঙ্গত, পাম্পের সাহায্য ছাড়াই যে কূপ থেকে মাটির নীচে থাকা জল স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফোয়ারার মতো ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে তাকে আর্টেজীয় বা আর্তেজীয় কূপ বলে। এই ক্ষেত্রে তা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত সিরাজুল বাবুর।
আরও পড়ুন- গরমের দাপটে কেমন আছে উত্তরবঙ্গ? স্কুল ছুটি বিতর্ক নিয়ে শিক্ষা মহলে জমছে উদ্বেগের মেঘ