সামসেরগঞ্জ: ভোট (Vote) দিতে গিয়ে জানলেন তাঁরা সকলেই ‘মৃত’। কেউই বেঁচে নেই। বলাই বাহুল্য, তাঁদের ভোট দেওয়ারও অধিকার নেই। তবুও বিভিন্ন ভাবে দুপুর থেকে রাত ভোট দেওয়ার জন্য লড়াই চালালেন কাগজে কলমে ওই সব ‘মৃতের দল’। একজন দু’জন নয়, একসঙ্গে ৬ জন। ৬ জনই একই পরিবারের। শেষ পর্যন্ত কেউই ভোট দিতে না পেরে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
সামসেরগঞ্জের হাজি জনাব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৫ নম্বর বুথ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের ভোটার একটি পরিবারের ৬ সদস্য। এদিন নিজেদের পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে বেরোন তাঁরা। কিন্তু ভোট দেওয়া হল না। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁরা গিয়ে শুনলেন, সবাই মৃত! পুরো পরিবারই ভোটার লিস্টে মৃতের তালিকায় চলে গিয়েছে! এ কেমন করে সম্ভব! নানাভাবে ভোট দেওয়ার মরিয়া প্রয়াস চালালেন ৬ জন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ব্যর্থ হল প্রচেষ্টা। জানানো হল আবার ভোটার লিস্টে নাম তুলতে হবে। ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
এই ঘটনায় ভোটের পরে সামসেরগঞ্জে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এলাকার মানুষও তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকারের দাবির পাশাপাশি দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি তোলেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রশাসনের ভুলে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার তাঁরা প্রয়োগ করতে পারলেন না। নির্বাচন কমিশনের-ও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তাঁরা।
এদিন সামসেরগঞ্জে আরও দুটি এমন ঘটনা ঘটেছে। এক বৃদ্ধা এবং এক তরুণ ভোট দিতে পারেননি একই কারণে। সামসেরগঞ্জ বিধানসভার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের যুবক মোহাম্মদ অসিকুল মোমিন। বয়স ২২। বিগত দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও পরবর্তীতে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিলেও আজ জয়কৃষ্ণপুর প্রাইমারি স্কুলে ১০৪ নম্বর বুথে গিয়ে দেখেন তিনি মৃত। ফলে ভোট দিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় মোহাম্মদ অসিকুল মোমিনকে। অপর দিকে একি ঘটনা ঘটেছে সামসেরগঞ্জের নিমতিতা গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন শিবনগর গ্রামে। ৭২ বছর বয়সী মহিলা সামেনা বিবিকে মৃত বলে ঘুড়িয়ে দেওয় হয়। অথচ তিনি এখনও রীতিমতো বিধবা ভাতা ও পেনশন পান! অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেই বৃদ্ধার কথায়, ‘অফিসার বলে নাম নেই তোমার, বলে, ‘মারা গেছো তুমি! আমি মারা গেছি?’ বেকার ভাতা পাই, পেনশন পাচ্ছি। আমি তো বেঁচে আছি!’ ভোট দিতে না পারার খেদ ঝরে পড়ে ৭২-এর বৃদ্ধার। আর বছর ২২ -এর ওই তরুণের কথায়, “আমি ভোট দিতে গিয়েছিলাম। আমাকে বলল আপনি মৃত! আমি বললাম, ‘আজব! আমি এই যে সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’ এর আগে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট দিয়েছি।” এর পর নাকি দায়িত্বে থাকা অফিসার জানিয়ে দেন, তাঁদের করণীয় কিছু নেই। আবার ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হবে তাঁকে। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিতে পেরে বিরক্ত ওই তরুণ বলছেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারলাম না!’
আরও পড়ুন: Samserganj Jangipur By-Election: ‘মাস্ক নিন, ভোট দিন,’ কংগ্রেস নেতাকে সরাতে গিয়ে কাঁচুমাচু পুলিশ!