মুর্শিদাবাদ: “বহু অসহায় মানুষ এখনও পাকা ঘর পায়নি। এরপর হয়ত আমাদের বাড়ি গিয়ে মানুষ বিক্ষোভ দেখাবে। তা থেকে বাঁচতেই আমরা আজ ইস্তফা দিতে চাইছি।” আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) ঘর নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাগাতার দুর্নীতির খবরেই মধ্যেই কার্যত কাঁদতে কাঁদতে এ কথা বললেন মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার ভরতপুর দুই নম্বর ব্লকের মালিহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat) প্রধান। তাঁর সঙ্গেই এদিন উপপ্রধান-সহ ইস্তফা দিলেন পঞ্চায়েতের ১৭ জন সদস্য। এ খবর নিয়ে জোরদার শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, কোথাও আবাস যোজনার ঘরের সার্ভে করতে গিয়ে মার খাচ্ছেন সরকারি আধিকারিকরা। কোথাও আবার আশাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের প্রায় প্রতি জেলাতেই আবাস যোজনার ঘর দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের ঘর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। উঠেছে ঘরের বিনিময়ে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ। যা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরই কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সার্ভের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, অভিযোগ, সার্ভের কাজে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের বিরোধের মুখে পড়ছেন সরকারি কর্মীরা। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ মানুষদের নাম তালিকায় যোগ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। মানা হচ্ছে না ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি শর্ত।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েতে গণ ইস্তফা দেওয়ার ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রধান সৈয়দ নাসিরুদ্দিন বলেন, “এলাকার বহু অসহায় মানুষের মাটির বাড়ি রয়েছে। তাঁরা এখনও পাকা বাড়ি পায়নি। সরকারিভাবে ২০১৮ সালে তদন্ত হয়েছিল। বর্তমানেও সরকারিভাবে তদন্ত হচ্ছে। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন গ্রামে কত মানুষ বাড়ি না পেয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে। তাই বুকে ব্যথা নিয়ে আজ আমরা পদত্যাগ করছি। আমরা চাই সাধারণ গরিব মানুষ ঘরটা পাক। এখন তো কত মানুষের ছিটে বেড়ার বাড়ি। কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রয়েছে। কিন্তু পাকা ঘর নেই।” এরপরই কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “এই দৃশ্য দেখেও আমরা কিছু করতে পারছি না। আমি কীভাবে তাঁদের ঘর দেব? আমরা চাই এই অসহায় মানুষগুলো ঘর পাক। এরপর হয়ত পঞ্চায়েতের ১৭ জন সদস্যের বাড়ি গিয়ে মানুষ বিক্ষোভ করবে। প্রতিবাদ জানাবে। তা থেকে বাঁচার জন্য আমরা ইস্তফা দিতে চাইছি। আমরা দলের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বর্তমানে নিজেদের আত্মরক্ষার্থে আর এই পদে থাকতে চাই না। দলের মধ্যে সাধারণ কর্মী হিসাবে থাকতে চাই।” তবে আজ ছুটির দিন হওয়ায় তাঁদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি ভরতপুর দুই নম্বর ব্লকের বিডিও আশিস মণ্ডল।