মুর্শিদাবাদ: মুখ্যমন্ত্রী আগেই সচেতন করেছিলেন স্বাস্থ্য সাথী কার্ড যে হাসপাতাল ব্যবহার করবে না, তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তারপরও উঠল সেই একই অভিযোগ। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না রোগী। এমনকি কার্ড আটকে রেখে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে না বলেও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কাঠগড়ায় মুর্শিদাবাদের রানিনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ তুলেছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক।
দাঁতের চিকিৎসার জন্য রানিনগরের মদনপুরের আজাবুল শেখ এক চিকিৎসকের পরামর্শ মতো শুক্রবার বহরমপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভর্তি হন। রোগীর দাবি, প্রথমে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের চিকিৎসা হবে। এরপর স্বাস্থ্য সাথী কার্ড জমা নিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’দিন হয়ে যাওয়ার পর রবিবার হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে এই চিকিৎসা হবে না। অপারেশন করতে হলে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।
রোগীর দাবি, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এখনও জমা রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের কাছে ওই পরিমাণ টাকা নেই। তাঁদের ভরসা একমাত্র স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডে চিকিৎসা হবে বলে এখন টাকা চাইছে কেন হাসপাতাল? সেই প্রশ্ন তুলছে রোগীর পরিবার।
এমনকি আরও অভিযোগ, রোগীকে হাসপাতালের ওপরের ওয়ার্ড থেকে নামতেও দেওয়া হচ্ছে না। জোর করে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ স্যান্ন্যাল। তিনি বলেছেন, “বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা খোঁজ খবর করছি। অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “দাঁতের যন্ত্রণা হচ্ছিল ভাইয়ের। আমরা এখানে নিয়ে আসি। ডাক্তারই আমাদের নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেই চিকিত্সা হবে। আমাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডটা চাওয়া হয়, আমরা দিয়েই দিই। পরে আমাদের দুদিন বাদে বলা হয়, অপারেশন করতে হবে। তাতে ৪০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু কার্ডে নাকি সেই অপারেশন হবে না। আমাদের কাছে তো ওত টাকা নেই, সেটাই জানাই। এবার আমার ভাইটাকে ছাড়ছেও না ওরা। ওপরের তলা থেকে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।”
নার্সিংহোমের দোতলার ওয়ার্ড থেকে জানলার দিয়ে রোগী চিত্কার করে বলেন, “আমাকে নীচে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ১০ তারিখে আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বিল হয়ে গিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে এই বিল না মেটানো পর্যন্ত আমাকে এখান থেকে নীচে নামতে দেওয়া হবে না। আমার কার্ডটাও নীচে রেখে দেওয়া হয়েছে।” যদিও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী আগেই সতর্ক করেছিলেন, “স্বাস্থ্য সাথী কার্ড না নেওয়া হলে, লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” কিন্তু তারপরও কীভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।