Nabadwip: নাটকে কোপ, নবদ্বীপে মঞ্চস্থ করা গেল না চন্দন সেনের ‘চৈতন্য বিমঙ্গল’
Nadia: নাট্যকার ও নাট্যসংস্থার দাবি, নাটকটি না দেখেই ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করা হয়েছে। আর তাতেই নাটক প্রদর্শন বন্ধের ফরমান জারি করেছে পুরসভা। তাদের দাবি, এরকম কোনও দৃশ্যই নাটকে নেই। নাটক না দেখে নাটক বন্ধ করার অধিকার কে দিল, প্রশ্ন তুলেছে তারা।
নদিয়া: পুরসভার নির্দেশে বন্ধ হল চন্দন সেনের ‘চৈতন্য বিমঙ্গল’ নাটকের মঞ্চায়ন। অভিযোগ, ইতিহাসকে বিকৃত করে এই নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। তারই প্রতিবাদ জানায় নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ। পুরসভায় অভিযোগ জানায় তারা। এরপরই নবদ্বীপ পুরসভা জানিয়ে দেয় এই নাটক মঞ্চস্থ করা যাবে না। এর আগে গত বছর উৎপল দত্তর ‘ব্যারিকেড’ নাটকের প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় নবদ্বীপের রবীন্দ্রভবনে মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল সেই নাটক। চন্দন সেনের বক্তব্য, “ধর্মের গণতান্ত্রিকতা প্রথম তৈরি করেছিলেন চৈতন্যদেব। যিনি সমস্ত রকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় মানুষকে রাস্তায় ডেকেছেন।”
সম্প্রতি নবদ্বীপ সায়ক নামে নাট্যগোষ্ঠীর তরফে চারদিনের নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয় নবদ্বীপের রবীন্দ্রসংস্কৃতি মঞ্চে। সেখানেই মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল চৈতন্য বিমঙ্গল। সেইমত মঞ্চও তৈরি হয়, সব টিকিটও বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু শেষবেলায় চৈতন্য বিমঙ্গল নাটক মঞ্চস্থে বাধা আসে বলে অভিযোগ।
ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি করে নবদ্বীপ থানা ও নবদ্বীপ পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েছিল গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সভাপতি প্রেমকুমার গোস্বামী বলেন, “মহাপ্রভুর ভাবাবেগ, জীবনদর্শন, ইতিহাসকে বিকৃত করে যদি কেউ কোনও প্রচার করে, সেটা তো মেনে নিতে পারি না। তার প্রতিবাদ হওয়া তো একান্ত প্রয়োজন। সেখানে যে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, তা অন্যায়। একজন মহামানবের জীবন নিয়ে, একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষের জীবনী নিয়ে এটা করা যায় না। সেই অধিকার কারও নেই।”
ইতিহাসের বিকৃতি কীভাবে হয়েছে? প্রেমকুমার গোস্বামীর দাবি, “এখানে দেখানো হয়েছে, শচী মায়ের সঙ্গে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবীর সুসম্পর্ক ছিল না, সে কারণেই শচীমা ষড়যন্ত্র করে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবীর ঘরে সাপ ছেড়ে দিয়েছিল যাতে সর্পাঘাতে তার মৃত্যু হয়। এই ধরনের বিকৃত ইতিহাস নবদ্বীপবাসীর ভাবাবেগকে আঘাত করছে। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। প্রশাসন আমাদের অভিযোগ, আপত্তিকে মান্যতা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিকভাবে এই নাটক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।”
এদিকে নাট্যকার ও নাট্যসংস্থার দাবি, নাটকটি না দেখেই ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করা হয়েছে। আর তাতেই নাটক প্রদর্শন বন্ধের ফরমান জারি করেছে পুরসভা। তাদের দাবি, এরকম কোনও দৃশ্যই নাটকে নেই। নাটক না দেখে নাটক বন্ধ করার অধিকার কে দিল, প্রশ্ন তুলেছে তারা। পরিচালক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, তথ্য বিকৃতির কোনও প্রশ্নই নেই। আর প্রশাসনই বা না দেখে এটা কী করে করল? এটা তো দমনপীড়নের সমান।
যদিও পুরপ্রধানের বক্তব্য, “আমি জানি না তারা দেখেছে কি না। আমি এত বিতর্কেই যাব না। যেখানে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ বলছে চৈতন্য পরিবারের বিরোধী। সুবিশাল পরিধি গোটা বিশ্বে। চৈতন্যভক্তদের মনে একটা আঘাত দেবে। আমি কোনও ধর্মের উপরই ভাবাবেগের আঘাত আনতে পারি না। আমি নিরপেক্ষ।” সায়কের সম্পাদক মোহন রায় বলেন, “নবদ্বীপের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ আপত্তি জানিয়েছে। তাই আমরা নাটক বন্ধ করতে বাধ্য হলাম।”