নদিয়া: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নির্দেশ মেনে পদত্যাগ করলেন নদিয়ার তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান। শনিবার রানাঘাটের সভা তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধানকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রধান চার বছর ধরে এলাকায় যান না বলে অভিযোগ আসে অভিষেকের কাছে। এরপরই সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, সোমবারের মধ্যে তাঁর কাছে যেন ওই পঞ্চায়েত প্রধান ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন। তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান পার্থপ্রতিম দে’র অবশ্য বক্তব্য, কেউ ভুল খবর দিয়েছে। তিনি গত চার বছরে একাধিকবার ওই গ্রামে গিয়েছেন বলেও দাবি করেন। সোমবার পর্যন্ত অবশ্য অপেক্ষা করলেন না তিনি। আজই বিডিও-কে পদত্যাগপত্র পাঠান।
তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান পার্থপ্রতিম দে বলেন, “চার বছরে নয় নয় করে আমি ২০০ বার গিয়েছি ওই গ্রামে। আমি প্রধান হওয়ার পর প্রথম পঞ্চায়েতের বার্ষিক সভা ওই গ্রামেই হয়েছিল। যাই হোক, তথ্য়টা সঠিক নয়। তবে আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমি নতুন তৃণমূল না, পুরনো তৃণমূল। প্রথম দিন থেকে দল করি। তাই দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা মাথা পেতে মেনে নেব।”
পার্থপ্রতিম জানান, দলের কাছে সঠিক তথ্য নেই। পার্থপ্রতিমের অনুমান, কেউ তাঁর বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে থাকতে পারে দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে। পার্থপ্রতিম বলেন, “এই নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। আমি দলের অনুগত সৈনিক বারবারই বলছি। তাই দলের সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব।”
এদিন সভামঞ্চ থেকে বারবার অভিষেক জানতে চান সেখানে ওই পঞ্চায়েত প্রধান উপস্থিত আছেন কি না। কিন্তু পার্থপ্রতিম দে ছিলেন না সেখানে। দলের এত বড় কর্মসূচি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এত তাৎপর্যপূর্ণ সভায় কেন গেলেন না তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান? পার্থপ্রতিমের জবাব, “গ্রামে কাজ ছিল। আমি যে সংসদের সদস্য সেখানেই কাজ শেষ করতে করতে দেড়টা বেজে যায়। তবে আমাদের এখান থেকে প্রচুর ছেলে গিয়েছে।”
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভাল কাজ যে করবে দল তাঁকে খুঁজে হবে। সসম্মানে তাঁকে পদে বসাবে। এটাই নতুন তৃণমূল। ২০২১ সালে যারা দলের সঙ্গে গদ্দারি করেছে, সব হিসাব আমার কাছে আছে। কড়ায় গণ্ডায় চোকাতে হবে। এই দল শুধুমাত্র একটা দল না, মায়ের সমান। আপনারা আমাকে জানান আপনার এলাকায় কাকে পঞ্চায়েতে দাঁড় করাতে চান। এ দায়িত্ব আমি সাধারণ মানুষকে দিলাম।”
তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান সম্পর্কে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান আছেন এখানে? আমি প্রধানকে জিজ্ঞাসা করব এই গ্রামে আপনি শেষ কবে গিয়েছিলেন? এই যে ধনিচা পাড়া তাতলা-১ পঞ্চায়েত এখানে বেশ কিছু তফশিলি জাতিভুক্ত পরিবার থাকে। তাঁরা একটা অভিযোগ আমার কাছে পাঠিয়েছিল। আমি চারজনের একটা দলকে পাঠিয়েছিলাম তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে। প্রধানের দেখা নেই, চার বছর হয়ে গেল। তিনি প্রধান থাকবেন কেন? সোমবারের মধ্য়ে ইস্তফা পাঠাবেন। প্রধানের নাম পার্থপ্রতিম দে। পার্থবাবু আপনি যদি আমার কথা শুনতে পান, কান শুনে খুলে রাখুন, মানুষ সার্টিফিকেট দিলে তবে আপনি প্রধান। আর সার্টিফিকেট না দিলে আপনি প্রধান নন। মানুষ সার্টিফিকেট দেননি, মানুষের জন্য আপনি কাজ করেননি। চার বছরে আপনি যদি মহানালা গ্রামে একবারও না যান আপনার প্রধানের চেয়ারে বসার কোনও অধিকার নেই। সোমবার সকালের মধ্যে আমার কাছে আপনার ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেবেন।”
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর পার্থপ্রতিম বলেন, দলের হয়েই কাজ করতে চান। দল যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেইমতো তিনি আগামী দিন কাজ করবেন। তাঁঁর দাবি, তিনি প্রথমে যুব কংগ্রেস পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কাজ শুরু করেন। অর্থাৎ তিনি তৃণমূলের পুরনো কর্মী। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল তাঁকে দিয়ে যেভাবে কাজ করাবে, তিনি সেইভাবেই কাজ করতে রাজি আছেন।