অশোকনগর: বহুতল নির্মাণের কাজ চললেও ছিল না শ্রমিক নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সেই খামতির মাশুল দিতে হল কেরলের কালামাস্সেরির ইলেকট্রনিক সিটিতে ধ্বসে মৃত্যু হওয়া চার শ্রমিককে। তাঁরা উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগর ও হরিনঘাটা থানা এলাকার বাসিন্দা। দক্ষিণী রাজ্য থেকে দুর্ঘটনার খবর আসার পর এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মৃত শ্রমিকদের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। কেন এমন অব্যবস্থা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তাঁরা। পাশাপাশি, মৃতদের পরিবারের পাশে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকারের দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি ১০ জন যুবক রাজমিস্ত্রির কাজে কেরলে যান। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন অশোকনগর থানা এলাকার শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের অসুদি গ্রামের বাসিন্দা নজ্যেস আলি, নূর আমিন মণ্ডল এবং বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েত এলাকার সালার হাটের বাসিন্দা কুদ্দুস মণ্ডল ও হরিণঘাটা থানা এলাকার বাসিন্দা ফয়জুল মণ্ডল। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে কোচির কালামাস্সেরির ইলেকট্রনিক সিটিতে একটি বহুতল নির্মাণের কাজ করছিলেন। সেখানেই নতুন একটি পিলার তৈরির জন্য গর্ত খুঁড়তে নেমেছিলেন প্রায় ছয়-সাতজন শ্রমিক।
কিন্তু আচমকাই উপর থেকে হুড়মুড়িয়ে মাটির ধ্বস নামতে শুরু করে। যার অধিকাংশই কাদামাটি। ফলে বাঁচার জন্য চিৎকার করার আগেই কাদামাটিতে চাপা পড়ে যান তাঁরা। এদিকে, বহুতলের নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। দেখতে পান ধ্বস নামা কাদার মধ্যে আটকে রয়েছেন কর্মরত শ্রমিকরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় দমকলে। যদিও উদ্ধারের আগেই দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় চারজনের।
এরপর মৃত্যুর খবর জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের বাড়িতে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না রেখে কাজ করানোর অভিযোগ তুলে সরব হন মৃতদের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। আরিফ মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা কেরলের একটি লাইভে দেখেছি জেসিবি দিয়ে দু’দিকের মাটি কেটে রাখা ছিল। আর সেই গর্তের মধ্যে নেমে কাজ করছিলেন মিস্ত্রিরা। কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না। তাই ধ্বস নামতে শুরু করলেও কর্মরত শ্রমিকরা উঠে আসতে পারেননি। যারা একটু উপরের দিকে ছিলেন তাঁরা গুরুতর আহত হলেও প্রাণ বাঁচাতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা নীচে ছিলেন তাঁরা কাদা মাটি চাপা পড়ে গিয়েছিলেন।’ এদিকে, নিজ্যেস আলির স্ত্রী নিলুফা বিবি বলেন, ‘এখানে কাজ না পেয়ে কেরালায় গিয়েছিলেন আমার স্বামী। গর্তের ভিতর মাটি নেমেছিলেন কাজ করতে। তখনই হুড়মুড়িয়ে ধরে যায় উপরের মাটি।’
প্রসঙ্গত, মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা শোকের ছায়া এলাকায়। নিরাপত্তার অভাবে এহেন দুর্ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। মৃতদের পরিবারের দাবি, সরকারি সাহায্যে অবিলম্বে তাদের পরিজনদের দেহ ফিরিয়ে আনা হোক এই রাজ্যে। সেই সঙ্গে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করুক সরকার।