কলকাতা: শুক্রবারের হরিদেবপুরের অ্যাকশন রিপ্লে বুধবারের বেলঘরিয়ায়। টানা ঘণ্টা পনেরোর খানাতল্লাসিতে ফের কুবেরের ধন এই বাংলার শহরতলিতেই। নগদে বাজেয়াপ্ত ২৮ কোটিরও বেশি। সঙ্গে রয়েছে সোনার বাট, রুপোর কয়েন। রাশি রাশি হিরে জরয়াত গয়না। অপার সম্পত্তির নয়া দিশা। হিমশিম ইডি। চোখ কপালে গোটা রাজ্যের।
শুরুটা হয়েছিল গত ২২ জুলাই। এক সপ্তাহ ঘোরার আগেই কেলেঙ্কারি কালো নদীতে হাবুডুবু গোটা বাংলা। খেটে খাওয়া ছাপোশা বাঙালির মাথায় এখন কিলবিল করছে অপার কীর্তি। মুখে মুখে এখন মন্ত্রী, মন্ত্রী ঘনিষ্ঠর টাকার গল্প।
এ যেন সেই সত্যজিত রায়ের নায়ক সিনেমার সিন। গল্পের অরিন্দম মুখোপাধ্যায় নয়, এখানে বাস্তবচরিত্র অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। কার্যত টাকার পাহাড়ে ডুব সাঁতার কাটতেন তিনি।
হেভিওয়েট মন্ত্রী, তাঁর বান্ধবীর নামে বেনামে সম্পত্তির কুলকিনারা খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে ইডি। ফি-রোজ সামনে অর্পিতা-পার্থর নতুন নতুন বাড়ি বাংলো ফ্ল্যাটের হদিশ। গত শুক্রবার কলকাতা জেলার চোদ্দো জায়গায় অভিযানের পর বুধবার ফের অভিযানে নামেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। আর তাতেই আবার যখের ধনের হদিশ।
সকাল দশটা থেকে রাত আড়াইটে। শহর শহরতলির ৬ জায়গায় হানা দিয়ে ফের চক্ষু ছানা বড়া তদন্তকারীদের।
ইডি-র আরেক দলের গন্তব্য ছিল বেলঘরিয়া। অর্পিতার পৈত্রিক বাড়িতে পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে ইডি-র আরেক টিম পৌঁছে যায় বেলঘরিয়া ক্লাব টাউনে। সেখানে অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। একসঙ্গে দুটিতেই হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে দু-তিনবার এসেছেন পার্থ। মিনিট পনেরো থেকে আধঘণ্টা করে সময়ও কাটিয়েছেন। সেই সূত্রেই অভিযান। ব্লক ফাইভেএ দুটি ফ্লাটের তালা ভাঙতেই চক্ষু চড়কগাছ । এ যেন ঠিক হরিদেবপুরের অ্যাকশন রিপ্লে।
সেলোটেপে মোড়া রাশি রাশি নগদ টাকা। খবর যায় আরবিআই-এ। চারটি মেশিন এনেও টাকা গুনতে হিমশিম খান ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা। দুহাজার পাঁচশোর নোট গুনতে গুনতে প্রায় রাত শেষ। রাত আড়াইটে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নগদে মেলে ২৮ কোটিরও বেশি। সঙ্গে রয়েছে তিন কেজি সোনার বাঁট, ১ কোটিরও বেশি গয়না রাশি রাশি রুপোর কয়েন। এরপর পালা টাকা নিয়ে যাওয়ার। সেখানেও সেই হরিদেবপুরেরই মোডাস অপারেন্ডি ইডির। নগদের পাহাড় সরাতে সেই ট্রাকভর্তি ট্রাঙ্ক, ট্রাঙ্কভর্তি টাকা।
অর্থাৎ হরিদেবপুরের ফ্ল্যাট এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে নগদে যে যখের ধন মিলেছে তার মোট অঙ্ক ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাহান্ন কোটি টাকা।
বুধবার বেলা এগারোটা কুড়ি মিনিটে কসবাতেও হানা দেয় ইডি। কসবার রাজডাঙায় তিনটি প্লট ঘিরে তৈরি অর্পিতার বিশাল প্রোডাকশন হাউজ়। এলাহি সেই বাড়ির নাম ইচ্ছে। অথচ, পুরসভার খাতায় বাড়ির অস্বস্তিই নেই। এদিন সেখানেও হানা দেয় ইডি।
প্রায় ১৪ ঘণ্টার টানা খানাতল্লাসিতে নিরাশ হননি ইডি অফিসাররা। কুবেরের গুপ্তধন না মিললেও ইচ্ছেয় মিলেছে একাধিক জরুরি নথি এবং ফাইল। ২০১৩ সালে তৈরি পার্থ ঘনিষ্ঠর এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিডেটের লাইসেন্স থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক লেনদেনের রাশিরাশি কাগজ পত্র বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সিসিটিভির ফুটেজ, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, মনিটরও।
গত ন’বছর ধরে নামে বেনামে যে কারবারের জাল ফেঁদে বসেছিলেন অর্পিতা, সেই পর্দাফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু এবার হাতে, মনে করছেন গোয়েন্দারা।
মাত্র সাতদিন। খানাতল্লাসি অভিযানে এরমধ্যেই আকাশ ছোঁয়া আর্থিক বেনিয়মের হদিশ মিলেছে। তদন্তের শেষে গিয়ে তাহলে সেই অঙ্ক কোথায় পোঁছয় , সেটাই এখন একশো কোটির প্রশ্ন!