উত্তর ২৪ পরগনা: আচমকাই ব্যাারাকপুর সাংসদ অর্জুন সিং-এর (Arjun Singh) বাড়িতে এলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, ব্যারাকপুর সাংসদের বাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দুই বিজেপি নেতা। এদিন বৈঠকের পর দুই নেতৃত্বেরই স্পষ্ট দাবি, বিজেপির আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক বিষয় ও দলের সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা সংক্রান্ত আলোচনাই এই বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল। ঠিক কোন বিষয়ে কথা হয়েছে তা অবশ্য় স্পষ্ট করে বলেননি কেউই। দুই নেতাই একবাক্যে বলেছেন, ‘সব কথা মিডিয়ার জন্য নয়। এই বৈঠক পূর্বপরিকল্পিত।’
আচমকা, দুই হেভিওয়েট নেতার বৈঠককে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সম্প্রতি, ভাটপাড়া পুরসভায় গুলিকাণ্ডের জেরে পদত্যাগ করেছেন ভাটপাড়া পুরসভার মুখ্য পৌরপ্রশাসক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির’ অরুণের এই পদত্যাগ কার্যত তৃণমূলের মেরুদণ্ডে কিছুটা চোট বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। প্রায় তিনবছর লড়াইয়ের পর ভাটপাড়া পুরসভা হস্তগত হয় তৃণমূলের। ক্ষমতা উপভোগ করার আগেই এ যেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়া! ফলে, অরুণের পদত্য়াগে কিছুটা অস্বস্তিতে শাসক শিবির।
অন্যদিকে সামনেই পুরনির্বাচন। উপনির্বাচনের আগে পুরনির্বাচন হোক এমনটাই বারবার দাবি করে এসেছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে ব্যারাকপুরে বিশেষ করে ভাটপাড়ায় যা ‘অর্জুন গড়’ হিসেবে পরিচিত, সেই গড়ে ফের ক্ষমতা ফেরাতেই কি এখন থেকেই প্রস্তুত হচ্ছে বিজেপি? অন্তত, অর্জুনের (Arjun Singh) বাড়িতে শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) উপস্থিতি সেই সম্ভাবনাকেই জোরালো করছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
ওয়াকিবহালের একাংশের মতে, বৃহস্পতিবারই মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্টে তৃণমূলের একাধিক নেতাকে ‘কুখ্য়াত দুষ্কৃতী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শেখ সুফিয়ান-প্রমুখরা। রয়েছেন একাধিক পুলিশ অধিকর্তাও। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে এই দুষ্কৃতীদের পক্ষে রাজ্য প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। তাই এই রাজ্যে মামলাটির বিচার করা সম্ভব নয় বলেও দাবি করা হয়েছে।
তাত্পর্যপূর্ণভাবে, একুশের নির্বাচনে শেখ সুফিয়ান ছিলেন মুখ্য়মন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট। মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হয়েছিলেন নন্দীগ্রাম থেকে। বিপরীতে শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কেবল রাজ্যমন্ত্রী নন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বও রয়েছে তাঁর উপরেই। ভাটপাড়া গুলিকাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় স্পষ্টই জানান, ব্যারাকপুরের সাংসদ ও কিছু সমাজবিরোধীদের কারণেই সংবেদনশীল হয়ে উঠছে ভাটপাড়া। এরপরেই মানবাধিকার কমিশনের ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ যেন খানিকটা স্পষ্ট করছে রাজনৈতিক সমীকরণগুলি এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। লক্ষ্যণীয়, তৃণমূলের সাংগঠিনিক নেতৃত্বকেই কার্যত ‘দুষ্কৃতী’ বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার কমিশন যা নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথের সম্ভাবনাকেই প্রবল করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। আরও পড়ুন: ‘জিটিএ থেকে পদত্যাগ করুন বিনয়-অনীত’, তোপ অশোকের, ‘প্রতিক্রিয়াহীন’ গৌতম