উত্তর ২৪ পরগনা: মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে দেগঙ্গাতে চালু হল দুয়ারে বিদ্যালয়। আগামী ৭ এই মার্চ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। এরপর রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মাঝে স্কুল খুললেও, ফের গেটে তালা। ফলে পড়ুয়াদের মনে যেমন নানা প্রশ্ন, তেমনই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন মাস্টারমশাই, দিদিমণিরা। এই পরিস্থিতি কাটাতে এবার কুমারপুর পরশমণি শিক্ষা বিতান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চালু করলেন দুয়ারে বিদ্যালয়।
এ বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যারা রয়েছে, তাদের বাড়িতে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন মাস্টারমশাইরা। সিলেবাস অনুযায়ী যে সমস্ত ভুল ত্রুটি রয়েছে সেগুলো সংশোধন করে দিচ্ছেন। ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহ দিচ্ছেন ভালভাবে পরীক্ষা দিতে হবে। সাহস যোগাচ্ছেন, পরিস্থিতি কঠিন হলেও হাল ছাড়া যাবে না বলে। বাড়িতে বসে স্কুলের চেনা শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়ে উৎসাহিত ছাত্র ছাত্রীরাও। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষকদের এভাবে বাড়িতে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
কুমারপুর পরশমণি শিক্ষা বিতান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক ফয়জুল হোসেন বলেন, “২০২০ থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের আগামী প্রজন্ম। আমরা খুবই আহত। ওদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কোনও সাক্ষাৎ নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলোর এই মুহূর্তে কী মনে অবস্থা সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। এই অবস্থায় আমরা ঠিক করেছি পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি যাব। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যারা। ওদের মধ্যে পরীক্ষা নিয়েই একটা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। আদৌ পরীক্ষা হবে কি না সেটা ভাবছে ওরা। সেটা দূর করা এবং পঠনপাঠনে ওদের কোথায় ঘাটতি রয়েছে সেটাও আমরা বুঝব। কারণ, অনলাইনে ওদের সঙ্গে এতদিন ক্লাস হল। ফোন করেও ওরা মাঝেমধ্যে বুঝে নেয়। কিন্তু মাস্টারমশাইরা সামনে না থাকলে কী হয়? তাই আমরাই ওদের বাড়ি যাচ্ছি। প্রত্যেক পড়ুয়ার বাড়ি আমরা যাব। একাধিকবার যাব।”
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রিয়ানা সুলতানা বলেন, “করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। স্যরদের সঙ্গে যে সম্পর্ক, কোনও পরীক্ষার আগে ওনারা যেভাবে পাশে দাঁড়াতেন স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের বড় পরীক্ষার আগেই সেই পথপ্রদর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। তাই স্যররা আমাদের বাড়িতে চলে এসেছেন। আমরা দারুণ খুশি। এতে তো আমরা উপকৃত হবই। আমাদের ভাল করে পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছাটাও অনেক গুণ বেড়ে গেল।”
অন্যদিকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সন্দীপ সরকার ও মহম্মদ রাজীব জানান, ৭ ই মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা হবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু যেভাবে স্যররা বাড়িতে এসে গাইড করছেন, তাতে সব আশঙ্কা ভীতি মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। স্যরদের দেখতে পাচ্ছি, ওনাদের কথা শুনছি এতেই জোর পাচ্ছে তারা।