কলকাতা: রাত পোহাল। এখনও থমথমে দমদমের মতিঝিল এলাকা। ঢুকরে কেঁদে উঠছেন প্রতিবেশীরা। আরও নিহত দুই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা ক্ষণে ক্ষণে সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। দুই কিশোরীর মায়েদের কথা বলার ক্ষমতা কার্যত নেই। তবে জমা জল ভয় গেঁথে বসেছে এলাকাবাসীর মনে। অনেকেই আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন। অনেকে আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেবেন বলে জানাচ্ছেন। জল না কমা পর্যন্ত এলাকায় ফিরবেন না তাঁরা। তবে কবে যে জল নামবে সেটাই প্রশ্ন।
উত্তর ২৪ পরগনারই মতিঝিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ২ কিশোরীর। রবিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দুই কিশোরী। পুরো রাস্তা জলমগ্ন থাকায়, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় ল্যাম্পপোস্টে হাত দেয় এক কিশোরী। তখনই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয় এক জন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয় অপরজনও।
মৃত দুই কিশোরীর নাম শ্রেয়া বণিক (১২), অনুষ্কা নন্দী (১৩)। দুই কিশোরীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর সুরজিৎ রায়চৌধুরী। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, “দুর্ঘটনার উপরে কারও হাত নেই। দমদমের নিকাশি ব্যবস্থা বাগজোলা খালের উপর নির্ভর। খালের জল না নামলে কিছু করার নেই। দুই কিশোরী গরিব পরিবারের সন্তান। খুব খারাপ লাগছে। সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কী বলতে পারি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাগজোলা খালের সংস্কারের দিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই রাজ্য প্রশাসনের। স্থানীয় সূত্রে খবর, সৌন্দর্যায়নের জন্য লাগানো অনুচ্চ বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স খোলা ছিল। ওখানে নাকি এ ধরনের বাতিস্তম্ভগুলি এ ভাবেই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। তা থেকেই দুর্ঘটনা।
এদিকে, বুধবারই খড়দহে বাড়িতেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। তার আগের দিন অর্থাত্ মঙ্গলবার খড়দহে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় একই পরিবারের তিন সদস্যের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খড়দার পাতুলিয়াতে নিজেদের বাড়িতে জমা জলেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট দম্পতি ও তাঁদের কিশোর ছেলের। খড়দহের ই সরকারি আবাসনে নিজের স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে থাকতেন বছর চল্লিশের রাজা দাস। কিছুদিন ধরেই বৃষ্টির জেরে আবাসনের ভেতরেও জল জমেছে। জমা জলেই এদিন ঘরের মধ্য়েই বাড়ির কোনও কাজে বিদ্যুত্ সংযোগ করতে গিয়েছেল রাজা। সেইসময়ে তিনি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হন। স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে আসেন স্ত্রী পৌলমী। তিনিও বিদ্যুত্স্পৃষ্ট ( Electrocution) হন। মা-বাবাকে বাঁচাতে আসেন বছর এগারোর শুভ দাস। সেসময় খাটের ওপর বসেছিল তার ছোট ভাই। কিন্তু, মা-বাবাকে বাঁচাকে গিয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয় শুভও। দুর্যোগে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত তিন দিনে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
আরও পড়ুন: Khardaha Death: ফের খড়দহ! ঘরের গেটে হাত দিতেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু প্রৌঢ়ের