পশ্চিম বর্ধমান: পুজোর আগে প্লাবন পরিস্থিতি বঙ্গে। ফুঁসছে একের পর এক নদী। বাঁধের বিপত্তি জেলায় জেলায়। রাজ্যের বানভাসি পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকেই (DVC) দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ঝাড়খণ্ডের বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে।” তিনি অভিযোগ করেন, না জানিয়ে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া পাপ। পাল্টা, মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) অভিযোগকে সঠিক নয় বলেই দাবি করেছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন তথা ডিভিসি।
ডিভিসি সূত্রে খবর, মাইথন জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। দিনে মোট দেড় লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এই হারেই জল ছাড়ার পরিমাণ বজায় রেখেছে ডিভিসি। অন্যদিকে, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে ৩৫ হাজার কিউসেক হারে। ঝাড়খণ্ডে যদি ফের বৃষ্টি হয় তবে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জল ছাড়া হচ্ছে। বঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ম্যান-ম্যাড বলে অভিযোগ করেছেন মমতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঝাড়খণ্ডে যেহেতু অনেক বৃষ্টি হয়েছে ওরা আমাদের না বলে রাত ৩টের সময় আসানসোলে জল ছেড়ে দেয়। এদিকে আসানসোলের বৃষ্টির পরিমাণটাও প্রায় ৩৪৫ মিলিমিটার ছিল। আগে কখনও এত বৃষ্টি হয়নি। ফলে আসানসোল পুরো ডুবে যায়। একই সঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াও। তার পর কাল আবার ডিভিসি ১ লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছেড়ে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে, বিহারে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে। ওরা যদি ওদের ট্যাঙ্কগুলো, ড্যামগুলো একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে, তা হলে কিন্তু অনেক জল জলাধারে ধরতে পারে। মাইথন, পাঞ্চেতে তো অনেক জল ধরার ক্ষমতা। কিন্তু ওরা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কোনও পরিষ্কার করে না। কোনও ড্রেজিং করে না। ফলে ওদের খেসারতটা আমাদের দিতে হচ্ছে। এটা খুব অন্যায়। আমি বার বার এর প্রতিবাদ করছি। যদি বৃষ্টির জলে আমাদের বন্যা হতো আমি বুঝতাম। বৃষ্টি বেশি হচ্ছে, আমি সামলাতাম। কিন্তু বন্যাটা হচ্ছে জল ছাড়ার জন্য। ম্যানমেড ফ্লাড।”
যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস দেব বলেন, ”মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করছেন তা ঠিক নয়। নিয়ম মেনেই জল ছাড়া হচ্ছে। এই জল ছাড়ার জন্য সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন, ডিভিসি ও রাজ্যের রেগুলারিটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতে রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়র রয়েছেন। গোটা ব্যাপারটা জানিয়েই জল ছাড়া হয়। তাই এই অভিযোগ সঠিক নয়।” তবে ডিভিসির যে নাব্যতা কমে গিয়েছে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন ডিভিসি কর্তা।
এই প্রথম নয়, রাজ্যের প্লাবন পরিস্থিতিতে ডিভিসির বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার মত প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। যদিও, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের সাফ দাবি, কেন্দ্র-রাজ্য নজরদারিতেই জল ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু পলি পড়ে যেভাবে নদীগুলির নব্যতা কমেছে, তাতে কোনও ভাবেই জলাধারগুলি জল ধরে রাখতে পারছে না। তাই অতিরিক্ত জল ছাড়তেই হচ্ছে। যদিও রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য এই প্রথমবার ডিভিসি-কে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে এমনটা নয়। এর আগেও যখনই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে, তখনই সরকারের অভিযোগের তির ঘুরেছে ডিভিসি-র দিকেই। যদিও প্রত্যেকবারই ডিভিসি-র পক্ষ থেকেও একটা বিষয় সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যকে না জানিয়ে কখনই তারা জল ছাড়ে না। ছাড়তে পারেও না।
তবে, জল ছাড়ার পরিমাণ ফের বাড়লে বানভাসি পরিস্থিতি হতে পারে দামোদরের নিম্ন উপত্যকায় এমনটাই আশঙ্কা। যার জেরে আবারও ভেসে যেতে পারে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। পুজোর আগে নতুন করে এই বন্যা পরিস্থিতিতে যে ফের বিপদ বঙ্গ শিয়রে এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: Krishna Kalyani Resigns From BJP: দল ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণকল্যাণী
আরও পড়ুন: হুড়মুড়িয়ে ভাঙল গাছ, ভাসল ল্যাম্পপোস্ট! উদয়নারায়ণপুরে বিপদের মুখে TV9-এর প্রতিনিধি