পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও নদিয়া: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) মামলায় সিবিআই (CBI)-কে দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। গত ১৯ অগস্ট এই মামলার রায় দেয় পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তম ডিভিশন বেঞ্চ। খুন, অস্বাভাবিক মৃত্যু, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করবে সিবিআই এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলার তদন্ত করবে সিট। সিটের নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, এমনই নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের। এবার সেই তদন্ত শুরু করল সিবিআই টিম।
এদিন ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে বাঁকুড়ায় এলেন সিবিআই আধিকারিকরা। শুক্রবার বিকেলে সিবিআই এর এক তদন্তকারী দল কোতুলপুরের রায়বাঘিনী গ্রামে আসেন। তাঁরা গ্রামে এসে কথা বলেন ভোট পরবর্ত্তী রাজনৈতিক হিংসার বলি কুশ ক্ষেত্রপাল নামে এক বিজেপি সদস্যের মায়ের সঙ্গে।প্রসঙ্গত, সিবিআইর তদন্তকারী একটি দল বাঁকুড়ার কোতুলপুরের রায়বাঘিনী গ্রামে যায়। সেখানে সিবিআই আধিকারিকরা কথা বলেন রাজনৈতিক হিংসার বলি একটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। যদিও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি সিবিআই তদন্তকারী আধিকারিকরা।
এছাড়া সিবিআই এর প্রতিনিধি দল নদিয়াও যান এদিন। চাপড়া থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হৃদয়পুর গ্রামে ভোট পরবর্তী সময়ে, গত ১৪ মে ধর্ম মণ্ডল-সহ চার বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ধর্ম মণ্ডলের বাড়িতে সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা। এছাড়া ওই এলাকায় বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে সেই এলাকাগুলিতে সিবিআই প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণে যান। উল্লেখ্য, ধর্ম মণ্ডলের খুনে তার পরিবারের তরফে মোট ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয় চাপড়া থানায়। পুলিশ 8 জনকে গ্রেফতার-ও করে। তবে বাকি অভিযুক্তরা এখনও অধরা। এর পর নদিয়ার গাংনাপুর থানার বিবেকানন্দ পল্লিতেও যান সিবিআই আধিকারিকরা। সেখানে বিজেপি কর্মী উত্তম ঘোষের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় গত ১৩ জুলাই আদালতে একটি দীর্ঘ রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় মানবধিকার কমিশনের (NHRC)। কমিশন রিপোর্টে রাজ্য সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন আছে। হিংসার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও অভিযোগ করা হয়। সেই সঙ্গে রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়, ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তার তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়া হোক। অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর ঘটনার জন্য সিট গঠন করে তদন্তের সুপারিশও করা হয়।
জাতীয় মানবধিকার কমিশনের ( NHRC) রিপোর্টের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল-সহ পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তম ডিভিশন বেঞ্চ জানায় ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিবিআই এবং সিটকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
তদন্তে গতি আনতে চারটি দলে ভাগ হয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলির জন্য দুটি দল থাকবে কলকাতায়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে তদন্তের জন্য কোচবিহারে থাকবে একটি দল ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তদন্তের জন্য দুর্গাপুরে থাকবে একটি দল। শুক্রবার সন্ধায় দুর্গাপুর হাউসে পৌঁছয় সেই সিবিআই দলটি। আরও পড়ুন: হাতাহাতিতে উত্তপ্ত বিশ্বভারতী, উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করলেন পড়ুয়ারা!