হাতাহাতিতে উত্তপ্ত বিশ্বভারতী, উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করলেন পড়ুয়ারা!
Visva Bharati: ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হতেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হল বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাসভবন। এমনকি আন্দোলনের কারণে বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল অফিসের রাস্তায় গেট থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় শান্তিনিকেতন থানার পুলিশের গাড়িও।
বোলপুর: ফের উত্তপ্ত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati)। শুক্রবার বিশ্বভারতীর মূল সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও ব্যাপক বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। সেই বিক্ষোভ তুলতে গেলে কার্যত হাতাহাতি বাধে বিশ্বভারতী নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। বিশ্বভারতী নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। তবে এখানেই শেষ নয়, বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিদুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chackrabarty)-এর সিএস বা আপ্ত সহায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান পড়ুয়ারা। তখন তিনি পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। এর পর উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের।
একের পর এক ঘটনা আর ঝামেলা লেগেই আছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিতর্ক যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে এখানে। গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। তিন ছাত্রকে বরখাস্ত করা নিয়ে সেই ঝামেলার সূত্রপাত। এদিন বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদে মুখর হন একদল পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও করেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ না তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ তাঁরা এই আন্দোলন করে যাবেন। পরবর্তীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন তাঁরা, এমনই হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্বভারতীর মূল সেন্টার অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিকে সেই বিক্ষোভ তুলতে গিয়ে কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি বাধে ছাত্রদের। তার পর এদিনের এই নজিরবিহীন ঘটনা। পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ উপাচার্যের আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে। গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘কেন শুনব তোমাদের কথা?’ পরে অবশ্য পড়ুয়াদের নিয়ে অফিসে গিয়ে কথা বলতে রাজি হন তিনি বলে খবর।
তবে বিশ্বভারতী সেন্ট্রাল অফিসের পর, এবার উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন ছাত্রছাত্রীরা । সেখানেই তাঁরা আন্দোলন চালাবে বলে দাবি করছেন। ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হতেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হল বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাসভবন। এমনকি আন্দোলনের কারণে বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল অফিসের রাস্তায় গেট থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় শান্তিনিকেতন থানার পুলিশের গাড়িও।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর তিন ছাত্রছাত্রীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ক্রমেই তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। নিন্দায় সরব হচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষক-ছাত্র মহলের বড় অংশ। যাদবপুর, উত্তরবঙ্গ, কল্যাণী, প্রেসিডেন্সি-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ও পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ছাত্রদের বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রতিহিংসামূলক আচরণ নয়, এর মধ্যে স্বাধীন মুক্ত চিন্তার স্বরকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রও রয়েছে। অবিলম্বে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সমস্ত পড়ুয়াদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ও ধিক্কার কর্মসূচি পালন করেছে এসএফআই। এদিকে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল নিদান দিয়েছেন উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তীকে তিনদিন ঘেরাও করা হবে। থাকবেন অধ্যাপক-পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকবে তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরাও। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। আরও পড়ুন: ‘নবান্নে চাকরি চান?’ লক্ষাধিক টাকার প্রতারণা, ধৃত তৃণমূল নেতা