আসানসোল: সাড়ে তিন ফুট বাই সাড়ে ছ’ ফুটের একটি বাক্স (Box)। এই বাক্সকে সম্বল করেই ২২টা বছর কাটিয়ে ফেলেছেন চা-ওয়ালা ষাটোর্ধ্ব গৌরীশঙ্কর জয়সওয়াল। এই বৃদ্ধের ঘর বাড়ির বালাই নেই। ওই বাক্সে দোকানদারি, সেখানেই দিনভর কেনা-বেচা, থাকা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকী রাত্রিযাপন। সবই ওই ছোট্ট বাক্সটিতে। স্থানীয়দের কাছে তিনি এক জ্যান্ত বিস্ময়। কী ভাবে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, একটা ছোট্ট বাক্সকে ভরসা কাটিয়ে দিলেন জীবনের দু’ দশক! কী বলছেন এই চা-কাকু?
একফালি জায়গার উপর একটা ছোট্ট বাক্স। সেটাই তাঁর জীবনের সম্বল। তাকে ভরসা করেই রুজিরুটি, সেই রাত যাপনের ভরসা। এক দুই বছর নয়, দীর্ঘ ২২টা বছর আসানসোল শহরে এভাবেই বসবাস ও দোকানদারি করছেন ষাটোর্ধ্ব গৌরীশঙ্কর জয়সওয়াল।
দেশের বাড়ি বিহারের ভাগলপুর। সেখান থেকে আসানসোলে চলে এসেছেন তাও প্রায় নয় নয় করে বছর চল্লিশ তো হবেই। প্রথমে ইস্কো কারখানার ঠিকাদারের আওতায় শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে আর জমেনি। একটা চায়ের দোকান করেছিলেন। কিন্তু যতবারই দোকান জমে উঠেছে ততবারই সেই অস্থায়ী দোকান ভেঙে ফেলেছে কখনও ইস্কো কর্তৃপক্ষ তো কখনও পুরনিগম।
তারপর থেকে বার্নপুর বাসস্ট্যান্ডে ওই বাক্সেই তাঁর ঘর বাড়ি, ওটাই ব্যবসার জায়গা। ওই অল্প জায়গাতে সকাল থেকে বিক্রি হয় চা। ধোঁওয়া ওঠা চায়ের মজা নিতে পৌঁছে যান প্রাতঃভ্রমণকারীরা। এভাবেই রাত গড়ায়। তার পর ওই বাক্সই গৌরীবাবুর রাত্রিবাসের ঠিকানা। বার্নপুরের সিটি বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে গৌরীশঙ্কর জয়সওয়ালের এই চায়ের দোকান থুড়ি বাড়ি।
তাঁর হাতের তৈরি চা না খেয়ে, সকালই শুরু করতে পারেন না অনেকে। বিশেষ করে সেখানকার বাসকর্মীদের গৌরীর দোকানের চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু হয় দিন। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলায় এসেছিলেন সেই কবে। প্রথম প্রথম এদিক ওদিক আস্তানা ছিল। তার পর থেকে ওই সাড়ে ছয় ফুটের কাঠের বাক্সই তাঁর ঠিকানা। সেখানেই চলে রুজি রোজগার। ওই বাক্সই তাঁর একমাত্র সম্পত্তি। এই বাক্সই গৌরীর ভিটেমাটি।
ভোরবেলাই দোকানে ভিড় শুরু হয়। চা বিক্রি করতে করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। তার মধ্যে সময় করে ওখানেই দুপুরের খাবারটুকু বানিয়ে নেন গৌরী। তার পর আবার খোলে দোকান। চলে সেই রাতে পর্যন্ত। গোছগাছ করে, সারাদিনের হিসেব নিকেশ শেষ করে সেই বাক্সই হয়ে যায় তাঁর রাত্রিবাসের ঠিকানা। বর্তমানে অবশ্য এ রাজ্যের ভোটার গৌরী। আসানসোল নাকি বিহার, ঝট করে কেউ জিজ্ঞেস করলে নিজের বাড়ি কোনটা গুলিয়ে ফেলেন গৌরী। চোখ চলে যায় ছোট্ট বাক্সের দিকে।
কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও তার নাগাল পাননি এই চা বিক্রেতা। স্থানীয় কোনও নেতা কোনওদিন এই ভোটারের খোঁজখবর রাখেননি। বাড়ি না থাকার আক্ষেপ আছে। তবে এখানে যে বিশেষ অসুবিধা হয়, তেমনটাও নয় বলে জানান গৌরী। আসলে বাক্সবন্দী হয়েই তো কেটে গেল দীর্ঘ ২২ বছর। জীবন কাটে অভ্যাসে। এই অল্পেই খুশি গৌরীশঙ্কর।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘অনেক টেনশন, শান্তি দরকার…’ ইন্দ্রনীলের গানে ভুল ধরিয়ে মমতা বলে উঠলেন, ‘হয়নি হয়নি’