মমতার মুখে অখিল গিরির স্বীকৃতি, অধিকারীদের কড়া বার্তা?

'চুরি করে টাকা রাখার জায়গা বিজেপি', কাকে ইঙ্গিত করে এ বার্তা মমতার।

মমতার মুখে অখিল গিরির স্বীকৃতি, অধিকারীদের কড়া বার্তা?
ফাইল ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 07, 2020 | 7:20 PM

মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাতের আবহে সোমবার প্রথম জনসভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং উল্লেখযোগ্যভাবে সেই সভার স্থান মেদিনীপুর (Medinipur) কলেজ মাঠ। এই মাঠ তৃণমূলের দীর্ঘ চড়াই-উতরাই যাত্রাপথের সাক্ষী। মমতার একাধিক সভা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মাঠের। তবু, এবারের সভা বিশষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান ছিল, এই মঞ্চ থেকেই দলের ‘বেসুরো’ নেতাদের কড়া বার্তা দিতে পারেন দলনেত্রী। কিন্তু এদিন সরাসরি তেমন কোনও মন্তব্য মমতা করেননি ঠিকই তবে খুব নিপুণ কৌশলে তুলে ধরেছেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরির মতো ‘অধিকারী বিরোধী শিবিরের’ নেতাকে। অখিল গিরি যে তৃণমূলের পুরনো এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক এদিন ভরা সভায় ঘোষণা করেছেন মমতা। জোর গলায় বলেছেন, তাঁর প্রথমদিকের লড়াইয়ে কীভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অখিল।

মেদিনীপুর কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে এদিন মমতা বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস যখন আমরা তৈরি করেছিলাম, প্রথমবার অখিল গিরি লড়াই করেছিল মেদিনীপুরের পূর্বে। কাঁথির ওই আসনটি থেকে। সেদিন হয়তো আমরা জিততে পারিনি কিন্তু দ্বিতীয় হয়েছিলাম। প্রথমবার, মাত্র ২২ দিন সময় পেয়েছিলাম। সুতরাং মনে রাখবেন তৃণমূল কংগ্রেস অত দুর্বল নয়।” পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারী ও গিরিদের সম্পর্ক যে কতটা ‘মধুর’ তা সকলেরই জানা। ফলে শুভেন্দু যখন ক্রমাগত দলকে অস্বস্তিতে ফেলছে, তখন পাশের জেলার সভা মঞ্চ থেকে ‘বিরোধী শিবিরের’ অখিল গিরির প্রশংসা করে যে সরাসরি অধিকারীদের কড়া বার্তা পাঠালেন দলনেত্রী তা স্পষ্ট।

আরও খবর: যতই সরকার ভাঙার চেষ্টা করুক, ২০২১ আমাদের: মমতা

এখানেই না থেমে মমতার ফের হুঙ্কার, “কেউ যদি মনে করে তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্ল্যাকমেল করবে, বার্গেনিং করব, নির্বাচনের সময় দুর্বল করব তাহলে সেই বিজেপি দল ও তার বন্ধুদের স্পষ্ট করে বলব আগুন নিয়ে খেলবেন না। আর যাকেই জব্দ করো তৃণমূলকে পারবে না।” রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার এই বার্তা তাঁর ‘বেসুরো’ নেতাদের উদ্দেশেই। ভোটের মুখে যাঁরা হঠাৎ করে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন।

এদিন মমতা বলেন, “বিজেপি ভাগাভাগির রাজনীতি করে। ওরা চায় হিন্দু-মুসলিম করে মানুষকে ভাগ করে দাও, বাগদি-বাউড়ি ভাগ করে দাও। রাজবংশী-কামতাপুরি ভাগ করে দাও, অধিকারী-চ্যাটার্জী ভাগ করে দাও, ব্যানার্জী-ভট্টাচার্য, রাম-রহিম ভাগ করে দাও। এভাবে হয় না। এভাবে চলতে পারে না।” তৃণমূল নেত্রীর এই বক্তব্যকে দ্ব্যর্থ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বিজেপিকে কটাক্ষই শুধু লক্ষ্য নয়, ‘অধিকারী’ ও ‘ব্যানার্জী’কে আলাদা বাক্যে রাখলেও তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ, অনুমেয়। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল এখন ‘বটবৃক্ষ’, মহীরুহ। “মাটিতে পেরেক পুঁতলে মাটি ছড়িয়ে যায়। কিন্তু পাথরে পেরেক পুঁততে গেলে পেরেকটাই ভেঙে যায়”, সতর্কবার্তা মমতার।

আরও খবর: কৃষক স্বার্থে বনধ সমর্থন মমতার, তবে কি ‘অতীত অবতারে’ ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী!

বিজেপিকে তিনি লুট করে মুখ লুকোনোর নির্ভরযোগ্য জায়গা বলেও এদিন দাগিয়েছেন। মমতার কথায়, “বিজেপি করাটা একটা ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। লুটেরাদের টাকা প্রোটেক্ট করার কারখানা হলো বিজেপি।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সারদা কিংবা নারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এখন অন্য দলের সদস্য। কেউ আবার দল বদলের সম্ভাবনার জল্পনায় ভেসে রয়েছেন। মমতার এই মন্তব্য সেক্ষেত্রেও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। হতে পারে নাম না করে সেরকম কাউকে উদ্দেশ্য করেই হয়তো এদিনের বার্তা মমতার।