কৃষক স্বার্থে বনধ সমর্থন মমতার, তবে কি ‘পুরনো পথে’ ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী!

কৃষি জমি এবং কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে একদা সিঙ্গুর আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে তাঁকে কতটা সাফল্য দিয়েছে তা সর্বজনবিদিত।

কৃষক স্বার্থে বনধ সমর্থন মমতার, তবে কি 'পুরনো পথে' ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী!
ধানের ছরা হাতে মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 08, 2020 | 9:27 AM

মেদিনীপুর: কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইনের (Farm Laws) বিরোধিতায় মঙ্গলবার দেশজুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। সেই বনধে পাশে থাকার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠের জনসমাবেশ থেকে মমতা বলেন, “আগামিকাল সারা ভারত জুড়ে যে কৃষক আন্দোলনের (Farmers protest) ডাক দেওয়া হয়েছে, আমরা তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। আগামিকাল ব্লকে ব্লকে আমাদের লোকজন ধরনায় বসবেন। কৃষকদের স্বার্থে আমরা সবসময় রয়েছি।” মমতার এই বনধ সমর্থনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

১০ বছর হতে চলল বাংলায় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সরকার গড়া ইস্তক কোনও ধর্মঘট, হরতালকে সমর্থন জানাননি মমতা। বারবার বলেছেন, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর জন্য বনধ খারাপ। এমনকী বনধ রুখতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁর সরকারকে। বনধে যাতে জনজীবন সচল থাকে, তাই প্রত্যেক বারই বিশেষ সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে মমতা প্রশাসনকে। এহেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার সিদ্ধান্ত বদলালেন। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে মেদিনীপুরের মঞ্চ থেকেই মমতার হুঁশিয়ারি, “হয় কৃষি আইন প্রত্যাহার কর, বিজেপি না হলে সরকার ছাড়ো। ”

আরও পড়ুন: যতই সরকার ভাঙার চেষ্টা করুক, ২০২১ আমাদের: মমতা 

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে ওঠার পরই তাঁর মাইক্রোফোন স্ট্যান্ডের সামনে রাখা হয় ধানের ছরা, আলু, বেগুন, মূলো। পিছনের পোস্টারে লেখা ‘কালা কৃষি আইন প্রত্যাহারের’ দাবিতে সমাবেশ। বোঝাই গিয়েছিল, কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সরব হবেন তিনি। বাস্তবেও তেমনটাই হল। বক্তব্যের শুরুতেই হাতে ধানের ছরা তুলে নিয়ে মমতা বললেন, “কাল নবান্ন ছিল। আজও অনেক জায়গায় নবান্ন। সেই নতুন ধানের শপথ নিয়ে বলছি, আমরা কৃষকদের পাশে ছিলাম, থাকব। বেঁচে থাকার জন্য, রুজি রোজগারের জন্য সারা ভারতের কৃষক যে আন্দোলন করছেন তাতে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন। কাল সারা ভারত জুড়ে যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। কাল ব্লকে ব্লকে আমাদের লোকজন ধরনায় বসবেন।” তৃণমূল সরকার কোনও বনধকে সমর্থন করে না ঠিকই, কিন্তু তৃণমূল দল কৃষকদের বনধে পাশে আছে।

আলু, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও এদিন সোচ্চার হন মমতা। বলেন,”সব কেন্দ্র সরকার নিয়ে নিয়েছে। এখন আলু, পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। দিল্লি এখন আলু খাবে, পটল, মূলো, বেগুন খাবে। মানুষকে দেবে না। তাই কৃষকদের স্বার্থে আমাদের এই প্রতিবাদ। মাথায় রাখবেন আগে সব দেখত রাজ্য সরকার। দাম বাড়লে আমরা ভর্তুকি দিয়ে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতাম। আজ তো আমাদের হাত থেকে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। চাষিদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।”

আরও পড়ুন: ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড নিলে ভোট দিতে হবে তৃণমূলেই, নয়তো ছেলেরা দেখে নেবে! হুমকি ভাঙড়ের নেতার

এর আগে মমতা একাধিকবার বলেছেন, কৃষকদের স্বার্থে তিনি পথে নামতে প্রস্তুত। তাঁর বার্তা নিয়েই ইতিমধ্যে দিল্লির আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। ডেরেকের মোবাইল ফোন থেকে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন তৃণমূলনেত্রী। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহেই কলকাতায় এসেছিলেন শিরোমণি অকালি দলের প্রতিনিধি। তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন সুদীপবাবু জানিয়েছিলেন, তৃণমূল কৃষদের ডাকা বনধে নৈতিক সমর্থন দেবে। এরপর এদিন মমতা জোর গলায় বনধকে সমর্থনের কথা জানালেন।

মমতার এদিনের সমর্থনকে ‘অতীত অবতারে’ ফিরে আসার ইঙ্গিত বলেও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কৃষি জমি এবং কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে একদা সিঙ্গুর আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে তাঁকে কতটা সাফল্য দিয়েছে তা সর্বজনবিদিত। ফলে একুশের কঠিন নির্বাচনের আগে গ্রাম বাংলার কৃষকদের কাছে এদিন ফের পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা অত্যন্ত সুচিন্তিত বলেই মনে করা হচ্ছে।