মেদিনীপুর: সরকারি সাহায্য নিয়ে মহাবিপদে মমতা সরকারের পরিবার। টাকা পেয়েছিলেন, অর্ধেক বাড়ি বানিয়েছেন। কিন্তু মাঝ পথেই টাকা বন্ধ। স্তব্ধ নির্মাণ। এদিকে আবার মাথার গোঁজার পুরনো ঠাঁইও ভেঙেছিলেন নতুনের আশায়। অগত্যা প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ থাকা একটি স্কুলবাড়িতে ঠাঁই নিয়েছে মমতা সরকার ও তাঁর জায়ের পরিবার। মেদিনীপুর শহরের বক্সিবাজার এলাকায় অন্ধরানির প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ হয়ে রয়েছে বিদ্যালয়টি ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে । আর সেই বিদ্যালয়ে এখন ঠাঁই ওই এলাকারই দুটি পরিবারের। জানা গিয়েছে, আবাস যোজনায় ওই দুটি পরিবারই বাড়ি পেয়েছে। নতুন বাড়ি তৈরি হবে, এই আশায় পুরনো বাড়িও ভেঙে ফেলেন। কিন্তু তারপরও এখনও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
নিজেদের তৈরি করা বাড়ি ভেঙে এখন মহাবিপদে পড়েছেন ওই দুটি পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁইটা পেয়েছে ওই বন্ধ হয়ে থাকা স্কুল বাড়িতে । শুধু এই দুটি বাড়ি নয়, মেদিনীপুর শহরের এরকম প্রায় ২৫০০ বাড়ি রয়েছে, যা নির্মীয়মান অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় এক বছর ধরে ।
পৌরসভা, প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে ওই পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, আবাস যোজনার টাকা আসাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলায়। তাই স্থগিত প্রকল্পের কাজ। আর তাতেই সমস্যায় পড়ছে এরকম হতদরিদ্র পরিবারগুলি। স্কুল বন্ধ থাকলেও ভোট গ্রহণকেন্দ্র চালু ছিল । সামনে লোকসভার ভোট হলে ওই পরিবারগুলির চিন্তা আরও বাড়ছে। কেননা ভোট আসা মানে ওই পরিবারগুলোতে ওই স্কুল বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে।
এবার তাহলে পরিবারগুলি যাবে কোথায়? এই প্রশ্নই কোন উত্তর নেই পরিবারগুলির কাছে । রাস্তার ধারে ফুটপাত কিংবা সরকারি খোলা মাঠের বাইরে অন্য কোনও উপায় দেখছেন না পরিবারের সদস্যরা। মমতা সরকারের বক্তব্য, “বাড়ি হবে ভেবে পুরনো বাড়িই ভেঙে ফেলি। তারপর থেকে স্কুলেই রয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম নতুন বাড়ি হয়ে যাবে। এখন তো শুনছি বাড়ি তৈরির টাকা আসাই বন্ধ হয়ে গিয়েছি। এভাবে আমি কতদিন স্কুলে থাকব? যে কোনও দিন তো এখান থেকেও চলে যেতে হবে।” পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মমতা সরকারের জা। তিনি বলেন, “বাচ্চাগুলোও এই ঠান্ডার মধ্যে বাইরেই রয়েছে। ঘর তো ঘরই হয়। আমরা নানা জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু সেরকম কোনও সদুত্তর কোথা থেকেও মিলছে না।”
কী করবেন ছেলে মেয়েকে নিয়ে ? কোথায় উঠবেন তাঁরা। এর উত্তর নেই তাঁদের কাছে। মমতা সরকারের পরিবার আপাতত কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন । স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
মেদিনীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ আঙুল দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। পৌরসভার পৌর প্রধান সৌমেন খান বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়াতে এরকম সমস্যা হয়েছে। শুধু মেদিনীপুর পৌরসভা নয় গোটা বাংলা জুড়েই এই সমস্যা হয়েছে। পৌরসভা যতটা সম্ভব এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে।”