পশ্চিম মেদিনীপুর: পুজোর আগেই প্লাবিত বঙ্গ। এখনও স্থানে স্থানে স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। পুজোর আনন্দ দূর, জীবনের অস্তিত্বটাই এখন প্রবল হয়ে উঠেছে বন্যা দুর্গতদের জন্য। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উপকূলবর্তী এলাকার। এরই মধ্যে বঙ্গে ফের একটি নিম্নচাপের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে পরিদর্শনে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। সরাসরি বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্য়মন্ত্রীকেই (Mamata Banerjee) নিশানা করেন তিনি।
দিলীপ এদিন বলেন, “পুজোয় আনন্দ তো দূরের ব্যাপার। পুজো করার মতো পরিস্থিতিটাই নেই। তিন মাসে যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে এই ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি। জায়গায় জায়গায় জল জমে রয়েছে। কারোর মাথায় ছাদ নেই, পেটে ভাত নেই। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ৬ লক্ষ ত্রিপল বিলি হয়েছে। মাননীয়ার কাছে জানতে চাই কোথায় সেই ৬ লক্ষ ত্রিপল, তার হিসেব দিন। চারদিকে তো একটাও ত্রিপল দেখছি না।”
এখানেই থামেননি বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা। তিনি আরও বলেন, “মুখ্য়মন্ত্রী তো নিজের দলের লোক ছাড়া কাউকে দেখতে পান না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই! আমরা কাজ করতে চাইলে দেওয়া হয় না। সীমিত ক্ষমতায় যা পেরেছি, সেটুকুই করেছি।” উল্লেখ্য, এর আগে আমফান ত্রাণ-দুর্নীতি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা। সেই বিতর্কের জল হাইকোর্ট অবধি গড়িয়েছে।
বঙ্গ বন্যা পরিস্থিতির কারণ হিসেবে ডিভিসিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ঝাড়খণ্ডের বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে।” বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে।
উল্লেখ্য, দু’মাস আগেই হাওড়ার বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ডিভিসিকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। ২০০০ সালে রাজ্য জুড়ে বন্যার পর মমতা ‘ম্যান মেড’ তত্ত্ব। তার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ২০১৭ সালে এই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েও এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
দু’মাস আগে বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি ইস্যুতে সরকারিভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। চারপাতা সেই চিঠির প্রথম লাইনেই মুখ্য়মন্ত্রী লিখেছেন এই বন্যা ‘ম্যান মেড’। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমারেখা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ডিভিসির জল ছাড়ার জন্যই ডুবতে বসেছে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা। যদিও পাল্টা ডিভিসির পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে একটুও জল ছাড়ে না তারা। জল ছাড়ার পুরো বিষয়টিই রাজ্যের গোচরে রয়েছে। এবারও সেই একই তত্ত্ব খাঁড়া করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, মৌসম ভবন সূত্র জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী নিম্নচাপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এতে দুশ্চিন্তা ও স্বস্তি, দুই-ই রয়েছে। কারণ, যখন বাংলা পুজোর মুডে মেতে উঠবে, তখনই বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী ১০ তারিখ অর্থাৎ পঞ্চমীর দিনই বঙ্গোপসাগরে আন্দামান সাগর সংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ জন্ম নেবে। এর পর দফায় দফায় শক্তি বৃদ্ধি করবে সেই নিম্নচাপ। আন্দামান সাগর থেকে পূর্ব উপকূলে আসার পথে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয় করে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা যেহেতু বেশি থাকে, তাই সেই দিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘মুখ্যমন্ত্রী হতে বিহার থেকে পিকে-কে তুলে এনেছেন’, কটাক্ষ শুভেন্দুর
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ‘রবীন্দ্রনাথও আত্মহত্যা করতেন’, বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের ‘লাগামহীন নেশায়’ তোপ কেষ্টর!