পশ্চিম মেদিনীপুর: ভাদ্র-ধারাপাতে বঙ্গে বিপদ। অতিভারী বৃষ্টির (Heavy Rain) জেরে ডেবরায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু ৪ বছরের এক শিশুর। শনিবার ডেবরা ব্লকের ২ নম্বর ভরতপুর অঞ্চলের পশ্চিম বৈতা এলাকায় ঘরের দেওয়াল ভেঙে তারমধ্য়ে চাপা পড়ে যায় ওই শিশু। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে মৃত শিশুর নাম নীল হেমরম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতি ভারী বৃষ্টির (Heavy Rain) জেরে বেশ কিছুদিন ধরেই জলমগ্ন হয়েছিল গোটা এলাকা। বৃষ্টি থামার পর জল নামতে শুরু করে। কিন্তু, জল নামলেও বিশেষ লাভ হয়নি। শনিবার, বাড়ির মধ্যেই খেলছিল নীল। বাড়ির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেইসময় আচমকা বাড়ির কাচা দেওয়াল ভেঙে পড়ে তার উপর। তিনদিন ধরে জলে ভিজে ভার ধরে রাখতে পারেনি। তার জেরেই এই বিপত্তি। সঙ্গে সঙ্গে দেওয়াল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। খবর পাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। দ্রুত দেহ উদ্ধার করা গেলেও ততক্ষণে নীলের দেহে আর প্রাণ অবশিষ্ট ছিল না। পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
মৃত নাবালকের এক আত্মীয়ের কথায়, “বাচ্চাটা ওর মায়ের সঙ্গে ঘরের দুয়ারে বসেছিল। সেইসময়ে আচমকা দেওয়াল ভেঙে পড়ে। হঠাত্ করে যে দেওয়াল ভেঙে পড়বে বুঝতে পারিনি কেউ। সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ছেলেটা মরে গিয়েছে। আমরা ভাবিনিও যে এরকম হবে। যখন পুলিশে খবর দিয়ে বডিটা বের করা হয়, তখন সব শেষ।”
শিশুৃ-মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “যেকোনও মৃত্যুই অত্য়ন্ত দুঃখজনক। শিশুটির পরিবার অত্যন্ত দুঃস্থ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হলে সরকারি তরফে যে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই অনুদান দ্রুত আমরা শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এছাড়াও সর্বতোভাবে সরকার ওই পরিবারের পাশে রয়েছে।”
সম্প্রতি, বঙ্গে একাধিক ঘূর্ণাবর্ত ও অতিবৃ্ষ্টির জেরে প্রায় বানভাসি অবস্থা একাধিক জেলায়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, মায়ানমার লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। যা ধীরে ধীরে বাংলা-ওড়িশা উপকূলের দিকে সরে আসছে। এর প্রভাবে শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। রবিবারেও কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং নদিয়া জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি এবং নদিয়ায়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। যা আরও কিছুটা এগিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করবে। উত্তর ওড়িশা ও বাংলা উপকূলে এর প্রভাব বেশি থাকবে। মৌসুমী অক্ষরেখা জামশেদপুর এর পর দীঘা হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে শনিবার ও রবিবার রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলাতেই দিনভর মেঘলা বা আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে।
এদিকে বৃষ্টির পূর্বাভাসে প্রমাদ গুনছেন হুগলির খানাকূলের মানুষ। রূপনায়ারণের জলে প্লাবিত এলাকা। শিলাবতী, দ্বারকেশ্বরের জলও উপচে পড়ছে। এর মধ্যে যদি আবারও বৃষ্টি হয় তা হলে যে বিপদও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাস দেড়েক আগেও টানা বন্যা পরিস্থিতি হয়। প্লাবিত হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। ফের বৃষ্টি হলে দ্বারকেশ্বর ও শীলাবতীতে আরও জল বাড়বে। যা চাপ বাড়াবে রূপনারায়ণেরও। অন্যদিকে ডিভিসি যদি জল ছাড়ে তা হলে তো কথাই নেই!
একই দুর্ভোগের চিত্র ঘাটালের বিভিন্ন এলাকাতেও। এমনিতেই ঘাটাল বাংলার ভেনিস। সামান্য বৃষ্টিতেই ভেসে যায়। এর মধ্যে গত মাস দেড়েক ধরে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে জলযন্ত্রণায় কাবু মেদিনীপুরের এই শহর। শুক্রবারই বিশ্বকর্মা পুজো সেরে বাড়ি ফেরার পথে এক ব্যক্তি জলের তোড়ে ভেসে যান। পথে এতই জল যে মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতেও চরম ভোগান্তি হয় পরিবারের। আবারও যদি বৃষ্টি হয়, তা হলে এই সমস্ত এলাকার কী পরিস্থিতি হবে তা সহজেই ঠাহর করা যায়।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘বিলম্বিত বোধোদয়’, কটাক্ষ হেনেই বাবুলকে স্বাগত সমবায় মন্ত্রীর
আরও পড়ুন: TMC: দিনহাটায় শেষ কথা বলবেন উদয়ন-ই! ধিক্কার মিছিলে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল