পশ্চিম মেদিনীপুর: ফের কি সক্রিয় হচ্ছে মাও-চক্র? পুজোর মাত্র ১ দিন আগেই ফের মাওবাদী পোস্টার পড়ল মেদিনীপুর শহরে। গোটা গোলাপিচক ঈশ্বরপুর এলাকা ছেয়ে যায় মাওবাদী পোস্টারে (Maoist Poster)। শনিবার সকালে এলাকায় পোস্টার পড়তে দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত এলাকাবাসী। যদিও, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
শনিবার সকালে স্থানীয়রা দেখতে পান গোটা এলাকাজুড়ে লাল কালিতে সাদা কাগজে হাতে লেখা পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে লেখা হয়েছে, “মাওবাদী জিন্দাবাদ। আদিবাসীদের পাট্টা দেওয়া হচ্ছে না কেন? আদিবাসীদের হেনস্থা করা হচ্ছে কেন? ঘুষ নিয়ে পদ বিক্রি করা হচ্ছে কেন ? ঘুষখোর নেতারা জবাব দাও, নয়ত জবাব নিয়ে নেব।” আরও লেখা হয়েছে, ‘জনগণ জাগো, প্রশাসন বন্ধুরা সঠিক কাজ করো, চাকরির লোভ দেখিয়ে মাওবাদীদের কেনা যাবে না’। আর ওই পোস্টার উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। যদিও, পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পোস্টারগুলিও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে, এই প্রথম নয়, বিগত বেশ কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন সময়ে মাও.-পোস্টার উদ্ধার হয়েছে জঙ্গলমহল-মেদেনীপুর-পুরুলিয়া-সহ একাধিক এলাকা থেকে। কে বা কারা এই পোস্টার দিয়েছে তা যদিও জানা যায়নি। সম্প্রতি, অযোধ্যা পাহাড়ের উলসুলডুংরিতে পাওয়া কালো কালিতে কিছু রহস্যজনক পোস্টার উদ্ধার হয়। সেগুলি লেখা হয়েছিল আদিবাসী-মূলবাসিন্দাদের পক্ষে।
পুলিশ সমস্ত পোস্টারগুলি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, কিছু প্রাক্তন মাওবাদী চাকরী পাবার জন্য এই ধরনের কাজ করছে। এর আগেও ঝালদা এলাকা থেকে এই রকম পোস্টার উদ্ধার হয়েছিল। তবে এই পোস্টার উদ্ধারকে কেন্দ্র করে পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াহীন শাসক শিবির।
প্রসঙ্গত, পাহাড় ও জঙ্গলমহল নিয়ে বরাবরই আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জঙ্গলমহলকে কখনও ‘হাসিখুশি’, কখনও বা ‘উন্নয়নের মডেল’ বলেও দাবি করেছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা সরকারের আমলে মাও তৎপরতাও অনেকটাই কমেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, পরবর্তীকালে ধাক্কা খেয়েছে উন্নয়নের সুফল। মমতার জনপ্রতিনিধি আদিবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছতে পারেননি বলেই মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
যদিও, প্রাক্তন মাওবাদীদের দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে বরাবর সচেতন থাকার চেষ্টা করেছে তৃণমূল সরকার। সম্প্রতি, পুরুলিয়া জেলায় মোট ২০৬ মাওবাদীকে হোমগার্ড পদে চাকরী দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নিজেকে মাওবাদী দাবি করে চাকরি চেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পুলিশ সুপার। সেক্ষেত্রে, যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের সকলের সমস্ত নথি যাচাই করেই চাকরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ অধিকর্তা। ফের এই পোস্টার উদ্ধারের জেরে আবার মাও-চক্র সক্রিয় হতে পারে বলে আশঙ্কা তদন্তকারীদের একাংশের।
আরও পড়ুন: ‘জাগরণের লক্ষ্যে ঘণ্টি, কাঁসর, গীতা’, শুভেন্দুর ‘হরিনামে’ পদ্মের ‘সনাতনী’ ভোট!