Medinipur: ‘ওঁ তো ঈশ্বরের রূপ…’ ভোটের আগেই দেব-হিরণকে ফুৎকারে হারিয়ে গোপালকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতালেন মানুষ! জানুন তাঁর পরিচয়
Medinipur: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজামপুরের ঘটনা। নিজামপুর তিলন্দ,বালক রাউত,রবিদাসপুর,সৈয়দ করিম,নন্দনপুর,বসন্তপুর,গোবিন্দনগর গ্রামের মতো প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামের মানুষের কষ্টের অবসান হল।
মেদিনীপুর: নাম গোপাল! নিতান্ত ছাপোষা চেহারা। পায়ে হাওয়াই চটি, পরনে লুঙ্গি,পাতলা ফিনফিনে শার্ট। নদীতে ডিঙি পারাপার করান। প্রতিদিনই প্রতি ‘ট্রিপে’ই ভালো ভিড়। বর্ষাকালে সে ভিড় আরও বাড়ত। কোলে বাচ্চা নিয়ে শাড়ি উঁচিয়ে মহিলাদের পারাপার যেমন দেখেছেন, তেমনি দেখেছেন বয়স্কদের কাদা পথ পেরিয়ে আসা, প্রসূতি-রোগীদের কষ্ট। অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই তিল তিল করে টাকা জমিয়েছিলেন। আর সময় আসতেই সে টাকা বার করলেন পকেট থেকে। এক্কেবারে থোক ২৪ লক্ষ! লোকসভা ভোটের আবহে ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু বানালেন নিজের গ্রামে। যে সে সেতু নয়, এক্কেবারে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে। লোকসভা নির্বাচনের শেষ লগ্নে জোর কদমে ঘাটাল লোকসভায় প্রচার চালাচ্ছেন শাসক প্রার্থী দেব ও বিরোধী প্রার্থী হিরণ। তার মাঝে প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে দাসপুরে আস্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে সেতু তৈরি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মানুষের মন জয় করলেন এই প্রৌঢ়! প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে কাঁসাই নদীর ওপর এই সেতুর নির্মাণ করলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগেই। মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ম্বরে পুজো দিয়ে এ সেতুর উদ্বোধনও হল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজামপুরের ঘটনা। নিজামপুর তিলন্দ,বালক রাউত,রবিদাসপুর,সৈয়দ করিম,নন্দনপুর,বসন্তপুর,গোবিন্দনগর গ্রামের মতো প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামের মানুষের কষ্টের অবসান হল। দাসপুরের নিজামপুর ও পার্বতীপুরের মাঝে কাঁসাই নদীতে বাঁশের সাঁকো ছিল পারাপারের মূল ভরসা কিন্তু প্রতি বছর বর্ষায় বন্যার জল বাড়লে তা ভেঙে যেত। রাতবিরেত বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আসার উপায় ছিল না। প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ঘুরপথে আসতে হত।
অন্যদিকে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলও বাজারে নিয়ে যাওয়ার সমস্যা। ওই বাঁশের সাঁকো আবার নদীতে জল বাড়ার সাথে উধাও হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে নিজামপুর গ্রামের গোপাল মল্লিক প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই নতুন সেতু বানিয়ে দিলেন। বর্ষায় নদীতে পানার চাপের সমস্যার কথা ভেবে সেতুর মাঝে প্রায় ৪২ ফুট পিলার ছাড়া।
সেই অংশ মজবুত করতে লোহার তারের টান। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে। সেতু পেয়ে বেজায় খুশি গ্রামের মানুষ। তবে অনেকেই সরাসরি প্রশ্ন করছেন সাধারণ একজন ব্যক্তি এমন সেতু বানাতে পারলেও রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের পক্ষে তা করে দেওয়া গেল না কেন। অথচ গ্রামের মানুষ বারে বারে আবেদন জানিয়েছিলেন এক পাকাপোক্ত সেতুর জন্য। তবে যাই হোক নতুন ওই সেতু পেয়ে আপ্লুত গ্রামের মানুষ। গোপাল বললেন, “কষ্ট, চোখের সামনে মানুষকে ভীষণ কষ্ট পেতে দেখেছি। নেতামন্ত্রীদের আশ্বাস শুনেছি প্রচুর। নিজেই নৌকা পারাপার করতাম। সারাদিন ধরে চোখের সামনে যা দেখতাম, তারপরই ভেবেছিলাম একটা ব্রিজ বানাব।” আর গ্রামবাসীরা বলছেন, “কষ্ট! সে আর কী বলবো, তবে এরকম মানুষ ভগবানের দান! অনেকেরই তো টাকা থাকে, ভাবেন ক’জন?”
তবে এই সেতু তৈরিতে এলাকাবাসীর যে উপকার হবে তা স্বীকার করে নিয়েছেন, তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা, ঘাটাল সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতা কৌশিক কুলভি বলেন, “ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ হওয়ায় প্রচুর মানুষ উপকৃত হবে। প্রশাসনের তরফ থেকেও কাজটি হত কিন্তু একটু সময় লাগত।” একই কথা স্বীকার করেছেন এলাকার বিজেপি নেতা প্রশান্ত বেরা। তবে পাল্টা তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।