পশ্চিম মেদিনীপুর: উৎসবের অনুভুতি এখনও নিষ্প্রাণ। নেই বছরভর অপেক্ষার শেষে অন্তহীন আবেগ। অধরা বাঙালিয়ানার সেই চেনা গন্ধটাও। শারদীয়ার (Durga puja) মাঝেও চারদিকে হাহাকার, দিশাহীন ঘাটাল। সপ্তমীর সকালের ছবিটাও বদলায়নি একরত্তি। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু জল থৈ থৈ পথধাট। নিচু এলাকাগুলি এখনও জলের তলায়।
পুজোর (Puja) আনন্দে যখন মাতোয়ারা গোটা বঙ্গ, তখন বন্যার হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন সেই সমস্ত এলাকার শত শত মানুষ। জলের তোড়ে ভিটেহারা অনেক পরিবার রাজ্য সড়কের ধারে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘাটালের (Ghatal) মহকুমা শাসকের কার্যালয় থেকে একটু দুরে তাঁবু খাটিয়ে জীবন যাপন করছেন তাঁরা। সঙ্গে সম্বল বলতে জলবন্দি বাড়ি থেকে দু হাতে যতটা যা আনা গিয়েছে।
এহেন জল যন্ত্রনার মাঝে আজ পুজোর কোন দিন? এই প্রশ্নের উত্তর আজ তাদের কাছে নেহাতই বিলাসিতা। সুস্থ বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জ অসহায় মানুষগুলির কাছে। ঘাটালের দাসপুর (Dashpur), আজবনগরের (Ajabnagar) মত একাধিক এলাকার মানুষ শুধু তাকিয়ে আছেন সামান্য প্রশাসনিক সাহায্যের দিকে।
অভিযোগ, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সহ সমস্ত পরিচয় পত্র থাকা সত্ত্বেও মিলছে না কোনও রকম সরকারি (goverment Help) সুযোগ সুবিধা। বন্যায় (Flood) বাড়িঘর ভেসে যাওয়ার পর থেকেই প্রশাসন কোনও খোঁজ নেয়নি। ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার মত কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই রাজ্য সড়কের ধারে বসবার করতে হচ্ছে তাঁদের।
তবে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। ত্রিপল খাটিয়ে আশ্রয়রত মানুষগুলি উপেক্ষিত থেকে গিয়েছেন সামান্য ত্রাণ সামগ্রী থেকেও। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়নি বিস্কুট, চিড়ে, মুড়ির মত শুকনো খাবার বা চাল, ডাল। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থাও।
এমতাবস্থায় তাঁবুতে অনেক পরিবারের সঙ্গে রয়েছে শিশুও (Child)। যাদের নিয়ে বিপাকে সেই সমস্ত পরিবারগুলিও। ফলে এখানেই প্রশ্ন উঠছে, মহকুমা শাসকের কার্যালয় থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে আশ্রয় নিয়েও কিভাবে প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে নেই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলি?
এবিষয়ে ঘাটাল মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁদের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবরকম চেষ্ট করব। যা যা সমস্যা আছে তা মেটানোর চেষ্ট করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কংসাবতী ব্যারাজ থেকে ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। ফলে জলস্তর বেড়েছিল পাঁশকুড়ার কংসাবতী নদীতে। নদী বাঁধ বরাবর জল পৌঁছে যায় কানায় কানায়। কংসাবতীর বাঁধের একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা গিয়েছিল। দুর্বল হয়ে পড়েছিল নদী বাঁধগুলি। রবিবার রাত ১২ টা নাগাদ পাঁশকুড়ায় ডোম ঘাটের কাছে সেই বাঁধের পাশে থাকা প্রায় ১০ টি দোকান মুহূর্তেই হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় ।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: মুসলিম ও হরিজন অংশগ্রহণ করায় মেলেনি পুজোর সরকারি অনুদান! মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি