বর্ধমান: কেউ যাচ্ছিলেন পেটের টানে, কেউ চিকিৎসা করাতে, কেউ হয়ত নিছকই বেড়াতে। পেশা যাই হোক, দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় পরিণতি প্রায় সবারই এক। কপাল জোরে যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরা চোখ থেকে সরাতে পারছেন না সেই সার সার মৃতদেহ, তাঁদের কানে এখনও বাজছে ভয় আর কষ্টের আর্তনাদ। আর যাঁদের পরিজনদের ঘরে ফিরলেন না, তাঁদের মনে এখন গভীর ক্ষত। ঠিক যেমন বর্ধমানের কাটোয়ার সাদ্দাম। সদ্যজাত সন্তানকে একবার বুকে জড়াতে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। সেই ফেরাই হল শেষ ফেরা।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কৈথন গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম শেখ। রুজি রোজগারের দায়ে থাকতে হয় ভিনরাজ্যে। সন্তান জন্মের খবর পেয়েছিলেন, কিন্তু আসার সময় হচ্ছিল না তাঁর। সম্প্রতি সন্তানকে দেখতেই কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে কেরলেই থাকতেন সাদ্দাম। স্ত্রী, সন্তানের সঙ্গে কটাদিন কাটিয়ে শুক্রবার সকালে বিদায় নেন।
ছেলে যেদিন কথা বলতে পারবে, সেদিন ফের আসবেন, এই কথাই বলেছিলেন স্ত্রী সুলতানাকে। ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনার জন্যই হয়ত ফিরতেন তিনি। কিন্তু, সে ডাক আর শোনা হল না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এল দুঃসংবাদটা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ বছরের সাদ্দাম শেখের। দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে সুলতানা বিবির চোখের জলটাও যেন শুকিয়ে গিয়েছে। ঘটনায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাসের পর মাস যে সুলতানা বিবি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন, তাঁর সেই অপেক্ষা বোধ হয় আর কোনও দিনও শেষ হবে না।