মেমারি: রাজ্যে ফের এক আলুচাষীর মৃত্যু। লাগাতার বৃষ্টির কারণে চাষের ব্যাপর ক্ষতি। ঋণ মেটাবেন কী করে? সংসারই বা চলবে কীভাবে? দিনের পর দিন একরাশ মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরছিল তাঁকে। আর এরপরই মর্মান্তি সিদ্ধান্ত। মানসিক অবসাদ থেকে আত্মঘাতী আরও এক চাষি।
মৃতের নাম ভাস্কর মণ্ডল (৫৩)। বাড়ি মেমারির পাহাড়হাটি গ্রামে। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর।মেমারি থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজের পুলিশ মর্গে। মৃতের ভাই অরূপ সরকার জানান ছয় বিঘে জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন তার দাদা। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ধানচাষের দারুণ ক্ষতি হয়।পাকাধান পচে নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি আলুচাষের ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, “অনেকটা জমিতেই চাষ করেছিলেন দাদা। ধান-আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে, মহাজনের কাছেও ঋণ নেওয়া ছিল। শোধ করবেন কী করে যদি লাভই না হয়?এরপরই মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন তিনি। আর আজকে এই অবস্থা”
ভাস্কর মণ্ডল বিঘে পাঁচেক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টিতে আলু জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। আলু বীজ জমিতে জলে থাকায় পচে যায়। ধান ও আলুবীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েন ভাস্করবাবু। বাজারে চাষ করার জন্য ঋণও তিনি নিয়ে ছিলেন। এই অবস্থায় কি করে সংসার চলবে, আর কি করেই মহাজনী ধারদেনা শোধ করবেন তাই নিয়ে তিনি ভেঙে পড়েন। চরম মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তারপরই এই চরম সিদ্ধান্ত।
ভাস্করবাবুর দুই মেয়ে। তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চাষ করেই তার সংসার চলে। ধান-আলু চাষে মার খেয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে দাবি পরিবারের।
প্রসঙ্গত, এর আগে বর্ধমানের কালনায় আরও এক চাষির আত্মহত্যার খবর আসে। ঋণ শোধের দুশ্চিন্তায় ক্রমশ কেড়েছিল ঘুম। এরপরই আত্মঘাতী হয় সে। মৃত কৃষকের নাম মানিক শেখ (৪৩)। তিনি কালনা বিরুহা এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের দাবি, পরপর নিম্নচাপের দরুণ ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। বেড়ে যায় লোকসান। এই মরসুমে আর্থিক লোকসান কাটিয়ে ঋণ শোধ করতে আরও ঋণ গ্রহণ করেন চাষের জন্য।
জানা গিয়েছে, নিজের ও ভাগের জমি মিলিয়ে প্রায় ১৩ বিঘার বেশি জমিতে ধান ও আলু চাষ করেছিলেন তিনি। এরপর স্ত্রী ও মেয়ের গহনা বন্ধক রেখে বীজ এবং সার কিনতে ঋণ গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু অভিশাপ হয়ে এল জাওয়াদ। বাঁচাতে পারলেন না কিছু। আর শেষে মর্মান্তিক পরিণতি।