আলমগঞ্জ : যে সকল চাকরি প্রার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন তাঁরাই তাঁর অনুপ্রেরণা। যদি পরিস্থিতি আন্দোলনের দিকে যায় তবে তাই করতে হবে, এমনটাই মত ২০২২ সালের টেট পরীক্ষায় (TET Exam 2023) প্রথম স্থানাধিকারী ইনা সিংহয়ের। বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জের বাসিন্দা ইনা সিংহ (Ina Singha) এই পরীক্ষায় মোট দেড়শো নম্বরের মধ্যে ১৩৩ নম্বর নিয়ে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী করেছেন। ফল প্রকাশ হতেই খুশির হাওয়া তাঁর পরিবারে।
শুক্রবার টেটের ফলাফল (TET Results) প্রকাশ করেছে পর্ষদ। তাতেই বাজিমাত করেছেন বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জের মেয়ে ইনা। টেট নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের জেরে স্বচ্ছ পরীক্ষা এবং দ্রুত ফলাফল বের হয়েছে বলেই মত ইনার সিংহের । ২০০৮ সালে ইনা মাধ্যমিক পাশ করেন হরিসভা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় থেকে। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন ভাল নম্বর নিয়ে। ২০১৪ সালে ভূপেন্দ্রনাথ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় থেকে ইংরেজি অর্নাস নিয়ে স্নাতক হন ইনা। মেয়ের সাফল্যে খুশি ইনার মা কাকলি সিংহও। তিনি বলেন, “ও প্রথম থেকেই পড়াশোনায় ভালো। টেট পরীক্ষার সময় দিনরাত এক করে পড়াশোনা করতো। পড়াশোনাই ওর ধ্যান-জ্ঞান।” বাবা দেবাশিস সিংহ শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনও কাজ করতে পারেন না। মা কাকলি দেবী গৃহবধূ। তাঁদের বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে তিনটি দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। সেখান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে কোনওরকমে।
এদিকে টেটের রেজাল্ট হাতে পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ইনা নিজেও। তিনি বলেন, “পরীক্ষা ভাল হয়েছিল। এই ফল হবে আশা করিনি।” প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বিগত বছর থেকেই ব্যাপক অস্বস্তি বেড়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। লাগাতার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। কারাবন্দি হয়েছেন খোদ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক আমলাও। এই প্রেক্ষাপটে গত বছরের শেষ লগ্নে হয় টেট। তবে স্বচ্ছ টেটের লক্ষ্যে শুরু থেকেই বদ্ধপরিকর পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। কোনওভাবেই কোনও কারচুপি যে টেটের উত্তরপত্রে বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে করা সম্ভব না তা বিবৃতি দিয়ে জানাতে দেখা গিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। এদিকে এবার টেট পাশ করেছেন প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থী। তবে তবে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা নিয়ে চলছে চাপানউতর। ইনা জানান, টেট নিয়ে হাজার বিতর্কের মধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন চাকরি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনের কারণেই পরীক্ষায় স্বচ্ছতা এসেছে। আন্দোলনকারীদের লাগাতার লড়াইয়েরই সাফল্য এই পরীক্ষা।” তাঁর মতে, লড়াই করেই অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। তাই লড়াই চলবে। তিনি আরও বলেন, “গন্তব্যে এখনও পৌঁছতে পারিনি। তবে হাল ছাড়লে হবে না।”