বর্ধমান: মনোনয়ন পর্ব মিটতেই দেখা যাচ্ছে রাজ্যের বহু জায়গায় শাসকদলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই দেয়নি কোনও বিরোধীই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাচ্ছেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) অনেক প্রার্থীই। উড়ছে সবুজ আবির। চলছে বিজয়োল্লাস। এরইমধ্যে এবার যেন উলটপুরাণ বর্ধমানে। তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলের নেতারাই পারলেন না গ্রাম পঞ্চায়েত (Panchayat) আসনে দলের প্রার্থী দিতে। তাতেই কেল্লাফতে বামেদের। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার এই ঘটনা জেলার রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
বাম আমলে পূর্ব বর্ধমানের রায়না বামেদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরে থেকে প্রায় নিত্যদিনই রায়না উঠে আসত খবরের শিরোনামে। একাধিকবার বাম-তৃণমূল সংঘর্ষের খবর উঠে আসতো। এদিকে এবারের পঞ্চায়েত ভোটের আবহে যেন ফের একবার ফিকে হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক ‘জৌলুস’ ফিরে পাচ্ছে রায়না। ছোট্ট ভুলে বামেদের জয়ের রাস্তা নিশ্চিত করে দিল খোদ শাসকদলই। যা নিয়ে সরগরম জেলার রাজনৈতিক মহল। ১৫ তারিখ ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন। তারপর চলছিল স্ক্রুটিনি। শনিবার অনগ্রসর শ্রেণির জন্যে সংরক্ষিত রায়না ১ নম্বর ব্লকের শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৮ নম্বর বুথে যারা মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন তাঁদের মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনি শুরু হয়। ওই সময়েই ধরা পড়ে তৃণমূল প্রার্থী চাঁদ মহম্মদ মল্লিক মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাঁর জাতিগত শংসাপত্র জমা দেননি। স্বভাবতই বাতিল হয়ে যায় তাঁর মনোনয়ন।
এদিকে ওই আসনে তাঁকে টক্কর দিতে মাঠে নেমেছিলেন সিপিএমের ইসমাইল মোল্লা। কিন্তু, ফল ঘোষণার আগেই তাঁর সহায় হল ভাগ্য। প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেলেন তিনি। কার্যত একই কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে রায়না ২ নম্বর ব্লকের পাইটা ২ নম্বর পঞ্চায়েতের ১৯১নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থীর। এই আসনটি এবার অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু, মনোনয়নের স্ক্রুটিনিতে দেখা যায় দলের তরফে যে মনোনয়ন জমা পড়েছে তাতে রয়েছে পুরুষ প্রার্থীর নাম। পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আবার যে গোঁজ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দিয়েছে তিনিও পুরুষ। অন্যদিকে বামেদের হয়ে লড়ছিলেন সবিতা মাথুর। তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় সহজেই জিতে গেলেন সবিতা দেবী। এদিকে রায়নায় পুরনো জমি ফিরে পেয়ে খুশি স্থাবীয় বাম নেতৃত্বও। সিপিএমের অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে রায়নার ওই দু’টি গ্রাম সহ বহু গ্রামে আমরা পা রাখতে পারিনি। অথচ এই সময়ে ওই দু’টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীই দিতে পারল না। কিন্তু, আমরা প্রার্থী দিলাম। এতে আমাদের দলের কর্মীদের মনোবল অনেকটা বাড়ল।”