কেতুগ্রাম: কেতুগ্রাম কাণ্ডে রেণু খাতুনকে বুধবার আনা হল গোপন জবানবন্দির জন্য।কাটোয়া আদালতে এ দিন নিয়ে আসা হয় তাঁকে। কেতুগ্রাম থানার পুলিশ বিশেষ সতর্কতার মাধ্যমে আদালতে তোলেন তাঁকে। আদালত সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাত্রিবেলা তাঁর সঙ্গে যা-যা অত্যাচার করার অভিযোগ উঠছে সেই সমস্ত বিষয়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। পরে বিশেষ সতর্কতার মাধ্যমে ফের রেণুকে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ পৌঁছে দেবে তাঁর বর্ধমানে দিদির বাড়িতে।
এ দিন, আদালতে যাওয়ার পথে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রেণু খাতুন জানিয়েছেন, ঘটনার বিষয়ে তাঁর স্বামী আফশোস করলেও তিনি আর তার কাছে ফেরত যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। রেণু বলেন, ‘আমি চাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক ওদের। এটা সম্পূর্ণ ওদের প্ল্যানিং ছিল। এটা ওদের ভুল নয়,বড় পাপ।এটা যেহেতু ওরা প্ল্যানিং করে করেছে তাই এর মধ্যে যার যার আছে তাদের প্রত্যেকের শাস্তি হোক।
এবার ওদের শাস্তির দাবি নিয়ে আদালতে আসব। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি রাখব যাতে ওদের শাস্তি হয়।
বস্তুত, মঙ্গলবার দুপুরে কেতুগ্রামের নির্যাতিতা রেণু খাতুন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে স্টাফ নার্স গ্রেড ২ পদে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পরই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা তাঁকে সংবর্ধনা জানান। এরপর তিনি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক প্রণব রায়ের কাছ থেকে তাঁর কাজের দ্বায়িত্বভার বুঝে নেন। কাজে যোগদান করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন রেণু। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রবল ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি। তবে কাজে যোগ দেওয়ার পর আগামীতে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলেও জানান। স্বাস্থ্য ভবন থেকে কোনও নির্দেশ না আশা পর্যন্ত আপাতত রেণু খাতুন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত থাকছেন বলে জানিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়।
বস্তুত, ২০১৭ সালে অক্টোবর মাসে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুনের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় সরিফুল শেখের। বিয়ের আগে থেকেই নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। একাধিক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পর তিনি সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে নার্সপদে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু, চাকরিতে আপত্তি ছিল তাঁর স্বামী সরিফুল শেখের। স্ত্রী চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে সরিফুল। সরিফুলের ধারণা ছিল স্ত্রী সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এরপরই চরম পদক্ষেপ করে সে। রেণু যাতে যাতে কখনও চাকরি করতে না পারে সে জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর হাতে কোপ দেয় সরিফুল। পরে কাটা হাতটি ব্যাগে ভরে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। ঘটনার দু’দিন পর অভিযুক্ত সরিফুল কে গ্রেফতার করে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ।