পূর্ব বর্ধমান: বছর ঘুরতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election)। কিন্তু, তার আগে রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের খবরে অস্বস্তি বেড়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। ইতিমধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhhaman) মেমারি, গলসি, বর্ধমান শহরের নানা প্রান্ত থেকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এবার সেই রেশ মিটতে না মিটতে আবার গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এল সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতির দ্বায়িত্বপ্রাপ্তদের পদত্যাগের ঘটনা নিয়ে।
পূর্ব বর্ধমানের জামাড় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে এই মূহুর্তে পরিচালন সমিতির সদস্য সংখ্যা দশ। এর মধ্যে একসঙ্গে আটজনের পদত্যাগের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকে। পদত্যাগকারীদের অভিযোগ, যুব তৃণমূল কংগ্রেসের একটা গোষ্ঠী তাদের নানাভাবে অপমান ও হেনস্থা করছে। যে কারণে সমবায়ে সম্মানের সঙ্গে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। সেকারণেই পদত্যাগ বলে জানাচ্ছেন পদত্যাগীরা। এই সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কোনার বর্তমানে রায়ান ২ নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্য। তিনি এর আগে তৃণমূলের ব্লক সহ সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। এই মাপের একজন উচ্চ নেতৃত্ব সহ আট জন একসঙ্গে পদত্যাগ করায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সঞ্জয় বাবু বলেন, “আমরা যে কজন সমিতির পরিচালনার দায়িত্বে আছি তাঁরা সকলেই প্রবীণ। সম্মানের সঙ্গে দল করে এসেছি। আমি ২০১৯ সালে যখন এই সমিতির দ্বায়িত্ব পেয়েছিলাম সেসময় তিন লক্ষ টাকা লভ্যাংশ ছিল। এখন ২২ লক্ষ টাকা লভ্যাশং দাঁড়িয়েছে। পাশের গ্রাম মির্জাপুরে একটি শাখাও আমরা খুলতে পেরেছি। যুব তৃণমূলের কিছু দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পদে পদে অপমানজনক কথাবার্তা বলে। এমনকি পঞ্চায়েতে গেলেও সেখানে অপদস্থ হতে হয়।”
অপর এক পদত্যাগী তথা এই সমিতির সহ সভাপতি সেখ আপসিয়া জানান, “আমরা সবাই তৃণমূল কংগ্রেস করি। কিন্তু তৃণমূলের যুব গোষ্ঠীর অত্যাচারে আমরা বাধ্য হই পদত্যাগ করতে।” অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই যুব নেতা অরূপ গুপ্ত ও শেখর গাঙ্গুলিরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, উনি একতরফা ভাবে সমিতি চালাচ্ছেন। কোনো হিসাব দিতেন না। আমরা হিসাব চাইতে গেলে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেন। সমবায় থেকে চাষীরা ন্যায্য মূল্যে সার কেনেন। কিন্তু উনি কারো সাথে আলোচনা না করেই সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কেন সারের দাম বাড়লো গ্রামের মানুষ সেটা জানতে গিয়েছিল মাত্র।” একইসঙ্গে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সঞ্জয় কোনার বিধানসভা ভোটের আগে জেলার এক তৃণমূল নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির কাছে গিয়েছিলেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য হলেও গ্রামের উন্নয়নের জন্য কিছু করেননি।”
বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কাকলি গুপ্ত বলেন, “দল সঞ্জয় কোনারকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়েছে। এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি যে ওনাদের পদত্যাগ করতে হবে। মানুষ হিসাব চাইছে, হিসাব দিলেই হতো।” তবে বিষয়টি ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামাড় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের ম্যানেজার পাপাই কোনার।