পূর্ব মেদিনীপুর: ইয়াস (Yaas) পরবর্তী পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে রাজ্যে প্রথম ‘বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবস’-এর মাধ্যমে শুরু হল দিঘার উপকূলে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী। লক্ষ ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপন করে উপকূল অঞ্চলকে রক্ষা করা। সোমবার রামনগর ১ ব্লকের অন্তর্গত দিঘার ঝাউগেরিয়া মৌজাতে বন মহোৎসবের সূচনা করেন রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি, জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাস, জেলা বন আধিকারিক অনুপম সেন প্রমুখ।
প্রতিবারই ঝড় হলে ম্যানগ্রোভ যেন বর্মের ভূমিকা নেয়। কিন্তু বুলবুল থেকে আমফান হয়ে ইয়াসের তাণ্ডবে ম্যানগ্রোভের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে শুরু হয় বটে, তবে ক্ষত মিটতে না মিটতে চোখ রাঙায় একের পর এক দুর্যোগ।
এদিন মন্ত্রী বলেন , “শুধু গাছ লাগলে হবে না তার সঠিক পরিচর্চা করতে হবে আমাদের। এই নয় ঢাকঢোল পিটিয়ে সূচনা করলাম কিন্তু রক্ষণাবেক্ষন হল না, সেটা যেন না হয়। পঞ্চায়েত ও সনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কে এই কাজে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করতে হবে যাতে করে পরিচর্চা ও দেখভাল ঠিক মত হয়।”
জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “আমরা কাজ শুরু করি কিন্তু কাজগুলো সঠিক ভাবে চলছে কি না তার পর্যালোচনা করি না। যদি আমরা কাজ সঠিক ভাবে করতে চাই তা হলে আগামী ছয় মাস পর এই গতিপ্রকৃতি নজর করব। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, প্রকৃতি কে দিয়ে প্রকৃতির তাণ্ডব আমাদের আটকাতে হবে। এই ম্যানগ্রোভ বপন কাজ মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় করা হয়। কিন্তু ওনার ইচ্ছে মতো দিঘা থেকে শুরু হল এই কাজ। জেলার উপকূল প্রায় ৬৫ কিমি অর্থাৎ, হলদিয়া থেকে ওড়িশা প্রান্ত পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।”
জানা গিয়েছে, শুরুতে এই প্রকল্পে ৬৩০ হেক্টর জমি দেওয়া হয়েছে। পরে আরও দুশো হেক্টররের বেশি জমি দেওয়া হবে। নিজের সন্তানদের যেমন যত্ন করেন, গাছদেরও তেমন নজর দিলে সকলেই বাঁচব। বলেন জেলা শাসক। জানা গিয়েছে, উপকূল রক্ষায় ১১১ টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আর এই প্রকল্পগুলি চালানোর জন্য ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বন সংরক্ষণ কমিটি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও পঞ্চায়েত নিয়ে করা হবে। ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই কাজে এগিয়ে এলে দু’বছর রক্ষণা বেক্ষন করার পর সরকারি ভাবে তারা অর্থ সাহায্য পাবে।
জেলা বন আধিকারিক অনুপম সেন বলেন, রাজ্যের নির্দেশ মত এতদিন পূর্ব মেদিনীপুরে ম্যানগ্রোভ রোপনের কাজ এত বিপুল পরিমাণে ছিল না। প্রাথমিক ভাবে ৫৩০ হেক্টর কাজ শুরু হল। আগামিদিনে জেলা আরও জায়গা দিলে আমরা আরও গাছ লাগব। সমুদ্রের ধারে ২০০ হেক্টর জায়গায় হওয়া রোধক গাছ যেমন ঝাউ সহ অন্যান্য গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে।
জেলা প্রশাসন দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি, কাঁথি, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, তমলুক, কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেছে। আগামিদিনে আরও ম্যানগ্রোভ রোপন প্রক্রিয়া বাড়ানো হবে।
তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ঘটা করে যে উদ্যোগের সূচনা হল, আগামিদিনে সরকারি এই প্রকল্পের কী পরিণতি হয়, সঠিক ভাবে পরিচর্চা হয় কিনা এবং প্রশাসন কতটা নজরদারি চালায় সেটাই দেখার বিষয়। আরও পড়ুন: বুলবুল থেকে আমফান, দক্ষিণবঙ্গকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ, এবার?