বুলবুল থেকে আমফান, দক্ষিণবঙ্গকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ, এবার?

বুলবুল আর আমফানের ধাক্কায় নামখানা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার ম্যানগ্রোভ নিশ্চিহ্ন। গাছ না থাকায় ঝড়ের বেগ থেকে লোকালয়কে বাঁচানোর রাস্তাও বন্ধ।

বুলবুল থেকে আমফান, দক্ষিণবঙ্গকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ, এবার?
সুন্দরবন
Follow Us:
| Updated on: May 24, 2021 | 1:07 AM

কলকাতা: ২০২০ সালের ২০ মে। কলকাতা সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশ কালো করে সেদিন তীব্র ঝোড়ো হাওয়া। দুপুরেই নেমে এসেছিল রাতের অন্ধকার। বাতাসের তীব্রতায় কার্যত লন্ডভন্ড দশা কলকাতার। ২০০৭ সালের পর বঙ্গোপসাগরে একাধিক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। সিডার, আয়লা, ফণী, বুলবুল। কিন্তু কলকাতার এমন হাল তার আগে কখনও হয়নি। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন এটা কিছুই নয়। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য না থাকলে আরও ভয়াবহ পরিনতি হত কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের।

প্রতিবারই ঝড় হলে ম্যানগ্রোভ যেন বর্মের ভূমিকা নেয়। কিন্তু বুলবুল থেকে আমফানের তাণ্ডবে ম্যানগ্রোভের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে শুরু হয় বটে, তবে ক্ষত মিটতে না মিটতে চোখ রাঙাচ্ছে আবার এক দুর্যোগ। এবার ধেয়ে আসছে ইয়াস। এবারও কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির রক্ষাকর্তা সেই সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ। কিন্তু কেমন আছে তারা?

আমফানের তাণ্ডবের পরও সুন্দরবনকে বাঁচিয়েছে ম্যানগ্রোভ, এমন কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন। তাই তিনি জানিয়েছিলেন, সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগাবে তাঁর সরকার। গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস থেকে সে কাজ শুরুও হয়। এছাড়া এগিয়ে এসেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু একে তো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক লবনাম্বু উদ্ভিদ রয়েছে সুন্দরবন থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবাংলায়। তাছাড়া যে গাছগুলি লাগানো হয়েছে তারা এখনও শিশু। তাই এবারের ঝড়ের দাপটে তারা বিশেষ যুদ্ধ করতে পারবে না। থাকবে কিছু পুরনো যোদ্ধা। যারা একের পর এক ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আজ রণক্লান্ত। আবার লড়তে হবে তাদের।

একদিকে নদীবাঁধ, অন্যদিকে ভূমিক্ষয়, নদী ভাঙ্গন ইত্যাদি বিপর্যয় আটকাতে যে ম্য়ানগ্রোভ বড় ভূমিকা নেয়, তা আসলে কী?

ম্যানগ্রোভ হল গাছের একটি প্রজাতি। এরা লবণাম্বু উদ্ভিদ। যে জমিতে নুনের ভাগ বেশি, সেখানেই এদের জীবনধারণ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকার জন্য এই প্রজাতির গাছের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সমুদ্রের তীরবর্তী যে সব জমি অর্ধেক সময় জোয়ারের জলে ডুবে থাকে এবং বাকি সময়ে জল নেমে যায়, সেখানেই জন্মায় এরা। সুন্দরবনের নামও এসেছে একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ‘সুন্দরী’ থেকে। তাছাড়া গর্জন, গেঁওয়া, বাইনের মতো উদ্ভিদ নিয়ে তৈরি ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এই প্রজাতির উদ্ভিদ মাটি থেকে অতিরিক্ত নুন শোষণ করে তা পাতায় সঞ্চয় করে রাখে। নুনের পরিমাণ সম্পৃক্ত হয়ে গেলে সেই পাতা গাছ থেকে খসে পড়ে। এই ভাবে ম্যানগ্রোভ মাটিতে নুনের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল যত ঘন হবে, তার প্রচণ্ড বেগের ঝড় বা প্রবল জলোচ্ছ্বাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা তত বাড়বে।

দুয়ারে আবার একটা ঝড়, আতঙ্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বুলবুল আর আমফানের ধাক্কায় নামখানা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার ম্যানগ্রোভ নিশ্চিহ্ন। গাছ না থাকায় ঝড়ের বেগ থেকে লোকালয়কে বাঁচানোর রাস্তাও বন্ধ। ফের ঝড়ের খবরে তাই আতঙ্কিত হাজার হাজার মানুষ। সবার প্রার্থনা, এবারে যেন গত বছরের মতো তাণ্ডব না হয়।