পূর্ব মেদিনীপুর: বরাবরই রাজ্য রাজনীতির এপিসেন্টার নন্দীগ্রাম। সেই নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে অধুনা বিজেপি বিধায়ক ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) ‘সনাতনী সেবক’ বলে তীব্র কটাক্ষ করলেন নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলনের নেতা আবু তাহের।
সোমবার, নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মঞ্চে সরাসরি শুভেন্দুকে নিশানা করে তৃণমূল নেতা কটাক্ষ হেনে বলেন, “ওঁর বাড়িতে বাবা শিশির অধিকারী আর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী দুজনেই তৃণমূলের টিকিট জেতা সাংসদ আর ওঁ একা সনাতনী সেবক!” তৃণমূল নেতার আরও সংযোজন, ” বিশ্বাসঘাতক শুভেন্দু অধিকারী দিনের পর দিন মমতার খেয়ে বেইমানি করেছেন। আমরা নন্দীগ্রাম আন্দোলন করেছি আর ওঁ লাশের উপর রাজনীতি করেছেন। সব শেষ হয়ে গেলে সাদা পাঞ্জাবি পরে ছবিতে মালা দিতে এসে হাজির হয়েছেন।”
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কটাক্ষ হেনেছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির পুত্র সুপ্রকাশ গিরিও। ওই সভামঞ্চেই অধিকারী পুত্রের উদ্দেশে গিরিপুত্রের মন্তব্য, “বাংলার মাটিকে কলুষিত করছে বিজেপি। বাংলার মীরজাফর বার বার চেষ্টা করছে মিথ্যা মামলা করে জমি আন্দোলনের নেতা ও নন্দীগ্রামের কর্মীদের সিবিআইয়ের ভয় দেখাতে। ওঁর টার্গেট নন্দীগ্রামে অশান্তি তৈরি করা। ওঁর এই পরিকল্পনা প্রয়োজনে নন্দীগ্রামের মানুষই পুরনো ধাঁচে রুখে দেবে।”
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রামের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের। শুধু সুফিয়ান নন, সেই তালিকায় ছিল সুফিয়ানের জামাই ও আরও ১১ জন তৃণমূল নেতার নামও। অভিযোগ উঠেছিল শুভেন্দু অধিকারীর মদতেই এই ভাবে সুফিয়ানের নাম হিংসা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এছাড়াও বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়েই বিজেপি বিধায়ককে তীব্র আক্রমণ করেছে ঘাসফুল শিবির।
সম্প্রতি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষাকবচ দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তারা হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। আগেই রাজ্যের করা লিভ পিটিশনে এই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য ফের এলপিএ করে একই আবেদন জানায়। সেই আবেদনও শেষে খারিজ হয়ে যায়।
নন্দীগ্রামের বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। তাঁর দেহরক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতেও মামলা হয় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। সেইসব মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করা যাবে না বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপও করা যাবে না এখনই। নতুন কোনও এফআইআর হলেও তা জানাতে বলা হয়েছিল শুভেন্দুকে।
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। সেখানেও সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল থাকবে বলেই উল্লেখ করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। শীর্ষ আদালতেও বিচারপতিরা জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের ওপরে তাঁরা কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না। সব মিলিয়ে হাই কোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal on COVID19: ‘ওসব শিক্ষা-ফিক্ষা ডকে উঠে যাবে!’