পূর্ব মেদিনীপুর : একশো দিনের কাজের মাধ্যমে খাল সংস্কার হয়েছে। তার বোর্ডও লাগানো হয়েছে। খাল সংস্কারের জন্য একশো দিনের কাজে শ্রমিক হিসেবে নাকি কাজ করেছেন প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক এক ঠিকাদার। আবার মৃত ব্যক্তির নামও নাকি রয়েছে শ্রমিকের তালিকায়। রয়েছেন গ্রামের এক ডাক্তার। এভাবেই ১০০ দিনের কাজের টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরে মহিষাদলের নাটশাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে। এই নিয়ে সরব হয়েছেন গ্রামের একাধিক বাসিন্দা। শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। তবে অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চায়নি তৃণমূল। সবই বিরোধীদের মিথ্যে অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিল।
নাটশাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য এবং প্রধানের বিরুদ্ধে উঠেছে টাকা তছরুপের অভিযোগ। একশো দিনের কাজ ছাড়াও আবাস যোজনার টাকা নিয়েও দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সুকুমার পাত্র একশো দিনের কাজের টাকায় কারচুপি করেন। রাস্তা সংস্কার না হলেও কাজ হয়েছে দেখিয়েছেন। এমনও অভিযোগ উঠেছে, কেউ দশদিন কাজ করলে জব কার্ডে ২০ দিনের কাজের উল্লেখ করা হয়। তারপর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে ওই ১০ দিনের টাকা দিতে হয়। আবাস যোজনার ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ।
বেছে বেছে আবাস যোজনায় বাড়ির টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, তাঁরা আবাস যোজনার বাড়ির টাকা পাচ্ছেন। আবার বিজেপি করায় আবাস যোজনার টাকা দেওয়া হয় না। আবাস যোজনার ২০ হাজার টাকা আসলে পঞ্চায়েত সদস্যকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় বলেও অভিযোগ।
একশো দিনের কাজে এক ঠিকাদারের নাম থাকায় হইচই শুরু হয়েছে। ওই ঠিকাদারের গ্রামে প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে। ঠিকাদারের স্ত্রী বলেন, “আমরা একশো দিনের কাজ করি না। আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না, বলতে পারব না। আমি কিছু জানি না।”
গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার তপন কুমার মাইতির নাম রয়েছে শ্রমিক হিসেবে। তিনি বলেন, “আমার জব কার্ড রয়েছে। আমি হাতুড়ে ডাক্তার। আয় তেমন নেই। মাঝে মধ্যে একশো দিনের কাজ করছি।” যে খাল সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তিনি কয়েকদিন কাজ করেছেন বলে দাবি করেন তপনবাবু।
একশো দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খাল সংস্কার না করেও বোর্ড টাঙানো হয়েছে। মানুষের টাকা আত্মসাৎ করছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ এর জবাব দেবে।”
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সুকুমার পাত্র বলেন, “আবাস যোজনার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিরোধীরা অভিযোগ করবেই। বিজেপি করার জন্য কাউকে আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়া হয়নি, এই অভিযোগও সত্যি নয়।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, যে ডাক্তারবাবুর কথা বলা হচ্ছে উনি গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক। আগেও একশো দিনের কাজ করেছেন।